বিনোদন

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে অভিনেত্রী, অতঃপর…

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে অভিনেত্রী, অতঃপর...

বাবা ভারতীয় বিমান বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার। মা ছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপাল। ভাইবোনরা চিকিৎসক। তিনি নিজেও ভেবেছিলেন ডাক্তারই হবেন। কিন্তু পুনম ধিলোর সব পরিকল্পনা পাল্টে দিল ১৯৭৭ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’-র মুকুট।

পুনমের জন্ম ১৯৬২ সালের ১৮ এপ্রিল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কানপুরে। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন শহরে কেটেছে শৈশব। পড়াশোনা চণ্ডীগড়ের কারমেল কনভেন্ট স্কুলে। গ্র্যাজুয়েশনের পরে এমবিএ-ও করেন। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে যে কেরিয়ার ফিল্মজগতে শুরু হয়েছিল, তা আর পথ বদলায়নি।

পুনমকে প্রথম ছবিতে সুযোগ দেন পরিচালক যশ চোপড়া। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় পুনমের প্রথম ছবি ‘ত্রিশূল’। ৯০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন পুনম। পর্দায় রাজেশ খান্নার সঙ্গে তার জুটি ছিল জনপ্রিয়।
পুনমের ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘রেড রোজ’, ‘তেরি কসম’, ‘দার্দ’, ‘নিশান’ এবং ‘জয় শিব শঙ্কর’। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন অন্য ভাষার ছবিতেও। তার একমাত্র বাংলা ছবি ‘ন্যায়দণ্ড’।

আশির দশকের প্রথমসারির নায়িকা ছিলেন পুনম। তাকে বলা হত নিখুঁত সুন্দরী। অভিনেত্রী হিসেবে তার ক্যারিয়ার যথেষ্ট ওঠাপড়া দেখেছে। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছে তার বর্ণময় নায়িকাজীবন।

প্রথম ছবি ‘ত্রিশূল’ বক্সঅফিসে সুপারহিট হওয়ার পরে অনেক পরিচালকই আগ্রহী হন পুনমের সঙ্গে কাজ করতে। কিন্তু সুযোগ পান রমেশ তালওয়ার। তার ‘নুরি’ ছবিতে নায়িকা হন পুনম।

‘নুরি’ ছবির সময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রমেশ-পুনম। প্রথমে শুধু ‘ভাল বন্ধুত্ব’ থাকলেও পরে দু’জনের সম্পর্ক অন্যদিকে মোড় নেয়। পুনম ঠিক করেন এবার মুম্বাইয়েই থাকবেন কাজের সুবিধার জন্য। শোনা যায়, তাকে মুম্বাইয়ে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছিলেন রমেশ।

তবে পুনমের দিক থেকে এই সম্পর্কে সায় ছিল না। রমেশের দুর্বলতা বুঝতে পেরে তিনি ধীরে ধীরে সরে আসেন। যশ চোপড়ার সঙ্গেও তাকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু পুনম এই রটনা অস্বীকার করে এসেছেন বরাবর।

আরেক পরিচালককে নিজেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন পুনম। তিনি রাজ সিপ্পি। কিন্তু তখন রাজ বিবাহিত। তিনি পুনমের জন্য সংসার ভাঙতে রাজি ছিলেন না। পুনমও তার জীবনে ‘দ্বিতীয় নারী’ হয়ে থাকতে চাননি।

১৯৮৮ সাল পুনমের জীবনে ঘটনাবহুল। ওই বছর তার ব্রেক আপ হয় রাজ সিপ্পির সঙ্গে। আবার ওই বছরই বাবাকে হারান অভিনেত্রী। শোকবিধ্বস্ত পুনমের সঙ্গে এই সময় আলাপ হয় প্রযোজক অশোক থাকেরিয়ার। দুর্বল সময়ে সম্পর্ক গাঢ় হতে সময় লাগেনি।

স্বল্প প্রেমপর্বের পরে ১৯৮৮ সালেই বিয়ে করেন অশোক-পুনম। তবে এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দিহান ছিলেন পুনমের ঘনিষ্ঠমহল। তাদের ধারণা ছিল পুনম খুব তড়িঘড়ি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে তাদের ধারণা ঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল। পুনমের দাম্পত্য সুখের হয়নি।

বিয়ের পরে কাজ থেকে বিরতি নেন পুনম। সময় দেন তার মেয়ে পালোমা এবং ছেলে আনমোলকে। কিন্তু বেশিদিন ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে থাকতে তার ভাল লাগেনি।

ছবির সংখ্যা কমলেও নব্বইয়ের দশকে কাজে ফিরে আসেন পুনম। এই পর্বে তার উল্লেখযোগ্য ছবি ১৯৯৭ সালে, ‘জুদাই’। অভিনয় করেছিলেন একটি ক্যামিয়ো রোলে।

এরপর অবশ্য বড় পর্দায় কাজ খুবই কমিয়ে দেন পুনম। পরিবর্তে তিনি মন দেন টেলিভিশন এবং মঞ্চাভিনয়ে। টেলিভিশনে ‘এক নয়ি পহেচান’ ছোট পর্দায় তার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

২০০৪ সালে পুনম যোগ দেন বিজেপি-তে। মুম্বাইয়ে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি তিনি সমাজসেবায় জড়িত। এছাড়া মেক আপ ভ্যানের ব্যবসাও আছে। সংস্থার নাম ‘ভ্যানিটি’।

ব্যক্তিগত জীবনে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে পুনমকে। ১৯৯৪ সালে তার দাম্পত্য ভেঙে যায়। অশোক এবং পুনম, দু’জনেই জড়িয়ে পড়েছিলেন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে।

তবে দ্বিতীয়বার আর কাউকে বিয়ে করেননি পুনম। একাই বড় করেছেন দুই সন্তানকে। পাশাপাশি, বজায় রেখেছেন কাজের জায়গায় নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়।

পুনমের মেয়ে পালোমা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব জনপ্রিয়। ভালবাসেন ফুটবল আর ক্যারাটে। বলিউডে পা রাখবেন কি না, এখনও জানা যায়নি। তিনি স্টাইলিশ ছবি শেয়ার করলেই ভার্চুয়াল ওয়াল ভরে যায় অনুরাগীদের কমেন্টে। সূত্র: আনন্দবাজার

আরও পড়ুন ::

Back to top button