বিয়ের আসরে হঠাত্ শ্লোগান তুললেন টেট উত্তীর্ণ কণে!
ধর্মতলার ধর্নাস্থল ছাপিয়ে এবার বিয়ে বাড়িতেও পৌছাল টেট উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ আন্দোলনের ঢেউ।
নিজের বিয়ের আসরেই সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে নিয়োগের দাবিতে সরব হলেন টেট উত্তীর্ণ চাকরি প্রার্থী কনে অভয়া রায়। তবে শুধু সরব হওয়াই নয়,বিয়ের সাজে সজ্জিত থাকা অভয়া নিয়োগের দাবিতে রীতিমতো শ্লোগানও দিলেন। আর কনেকে হঠাত্ করে শ্লোগান মুখর হয়ে উঠতে দেখে অন্য নিমন্ত্রিতরা প্রথমে একটু হকচকিয়ে যান ঠিকই, পরে অবশ্য সব জেনে তারাও অভয়ার সঙ্গেই গলা মেলান। ক্ষণিকের জন্য হলেও এ সবের দরুন অভয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান বাড়ি কার্যত যেন হয়ে ওঠে টেট উত্তির্ণ চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম এক ঠিকানা। বিয়ে বাড়িতে হওয়া এমন কর্মকাণ্ডের ভিডিও অভয়ার বন্ধু রাজু বনিক সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয় ।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় অভয়া কলকাতা বা তার আশপাশের কোনও শহর কিংবা মফঃস্বল এলাকার বাসিন্দা নয়। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার খেড়ুর গ্রামে। অভয়ার বাবা বনমালি রায় দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ভাবে অসুস্থ। মা আল্পনাদেবী সাধারণ গৃহবধূ। দাদা লক্ষিকান্ত ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন। অভাবের সংসারের বড় হয়ে ওঠা মেয়ে অভয়া ছোট বয়স থেকেই লেখাপড়া শিখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপন দেখতেন। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য তিনি সমস্ত কষ্টকে উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যান। স্নাতক হবার পর অভয়া ডিএলএড কোর্সও সম্পূর্ণ করেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রাথমিকে নিয়োগের টেট পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হন। তার পর থেকে দীর্ঘ নয় বছর পেয়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু অনেকের মতই অভয়াও নিয়োগপত্র পাওয়া থেকে বঞ্চিতই রয়ে আছেন।
শিক্ষিকায় চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ বুকে নিয়েই ৬ মে বিয়ের পিড়িতে বসেন অভয়া। ভাতারের ছাতনী গ্রামের যুবক রিন্টু দে-র সঙ্গে অভয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৮ মে সম্পন্ন হয় তাঁদের বৌভাতের অনুষ্ঠান। সংসার জীবনে পা রাখলেও অভয়া নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন থেকে পিছু হাটতে নারাজ। এই বিষয়ে অভয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে তার স্বামীও।রিন্টু জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী যে দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সেটা ন্যায্য দাবি। যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে অভয়া নিয়োগের দাবি করছে। এতে অন্যয়ের কিছু নেই। তাই অভয়ার পাশেই থাকবেন বলে রিন্টু মন্তব্য করেন।
আর বিয়ের আসরে নিয়োগের দাবিতে শ্লোগান দেওয়ার প্রসঙ্গে অভয়া রায় বুধবার বলেন, “২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় উত্তির্ণ হই । তার পর থেকে নয় বছর পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ পত্র হাতে পাই নি।শুধু পেয়েছি প্রতিশ্রুতি। ধর্মতলার ধর্ণামঞ্চ থেক নিয়োগ চাই ,নিয়োগ চাই বলতে বলতে আমার মত সকল বঞ্চিতদের গলা ফেটে গেছে । তবুও নিয়োগ পাওরার সৌভাগ্য আজও হয় নি। চাকরি না পাওয়ার আক্ষেপ তাই বিয়ের শুভ দিনেও ভুলে থাকতে পারি নি। পরিনি হাসিখুশিতে থাকতেও। তাই আমার বিয়েতে নিমন্ত্রিত সহযোদ্ধারা ৬ মে আমার বাড়িতে এসে পৌছালে ঠিক করে ফেলি বিয়ের আসরেও ‘নিয়োগ চাই’ ছাড়া অন্যকোন আলোচনা আমাদের থাকবে না। তাই আমি আমার বিয়ের দিনে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সকল নিমন্ত্রিত অতিথিদের সামনেই ‘নিযোগ চাই’ শ্লোগান তুলেছি”। অভয়া আরো বলেন,আমাদের সাথে হওয়া বঞ্চনার কথা সবাই কে জানাতে এই পথই বেছে নিতে হয়েছে।
এদিকে নিয়োগের দাবিতে টেট উত্তীর্ণদের বিয়ে বাড়িতে সরব হওয়ার বিষয়টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের নজর এড়ায় নি। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই প্রসঙ্গে বলেন,”এমন আন্দোলন সত্যি নজিরবিহীন।এর পরেও যদি সরকারের হুঁশ না ফেরে তাহলে ধরে নিতে হবে এই রাজ্যের সরকার দু’কান-ই কাটা”।
বিজেপি নেতা এমন মন্তব্য করলেও আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে পাশ কাটান শাসক দলের নেতৃত্ব ।