বর্ধমান

পেশা ও প্যাশন কে সাথে করে এগিয়ে চলেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দলুইবাজার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান

পেশা ও প্যাশন কে সাথে করে এগিয়ে চলেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার দলুইবাজার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা পঞ্চায়েত প্রধান

রাজ্য জুড়ে নানান রাজনৈতিক নেতিবাচক ঘটনার মধ্যে উঠে এল এক ভিন্ন স্বাদের গল্প। না, ঠিক গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। নিজের পরিবার, পেশা ও প্যাশন কে সাথে করে এগিয়ে চলা এক নারীর জীবনের কিছু কথা। এই মহিলা পূর্ব বর্ধমান জেলার দলুইবাজার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত প্রধান। এর বাইরেও তার এক অন্য পরিচয় রয়েছে। তিনি বিউটিশিয়ান। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া তার নিছক শখ নয়। তার কথায় রুজি রোজগারের তাগিদেই মূলত এই কাজ শুরু।

পঞ্চায়েতের কাজ সামলে, ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি খুলেছেন তার বিউটি পার্লার কাম বিউটি শপ। প্রতিদিন নিয়মিত পঞ্চায়েত যাওয়ার আগে এবং পঞ্চায়েত থেকে ফিরে তিনি একা হাতে সামলান তার কাস্টমারদের। পঞ্চায়েতে প্রধানের আসনে বসে কলম চালানো মেয়েটার হাতেই তখন উঠে আসে কাঁচি কিংবা বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী। পরিবারের কাজ সামলে তিনি পার্লারে যান। আর সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা রওনা হন পঞ্চায়েতের উদ্দেশ্যে।

পঞ্চায়েতের কাজ মিটিয়ে ফের পার্লারে ফেরার পালা, এভাবেই চলছে দলুইবাজার ২ নম্বর পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমা কোঁরার দৈনন্দিন জীবন। তার এই কাজ সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমার এই কাজ শুরু মূলত রুজি রোজগারের জন্যই। কারণ পঞ্চায়েত প্রধানের পদ ৫ বছরের জন্য। সারা জীবন আমার পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থাকবে না। ভবিষ্যতে রুজি রোজগার করার জন্য এই কাজ শুরু। দুর্গাপুজোর আগে থেকে আমি এই বিউটি পার্লারটি চালু করি। সকালে বাড়িতে যে সমস্ত কাজকর্ম থাকে, ঘর ঝাট দেওয়া ঘর মোছা অন্যান্য কাজকর্ম সেরে আমাকে পার্লারে আসতে হয় না, নটা সাড়ে নটার দিকে। এরপর বারোটার দিকে দোকান বন্ধ করে স্নান খাওয়া সেরে অফিসে চলে যাই। অফিস কাজ হয়ে গেলে চারটে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে আবার এসে দোকানে থাকি। সন্ধে সাতটা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাই।”

তবে শুধু এতেই থেমে নেই পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমা কোঁরা। নিজের দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনযাত্রা সামলেও সপ্তাহে তিন দিন তিনি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। এর পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য শুরু করেছেন পড়াশোনা। তার মতে মহিলারা চাইলে সব পারেন। মহিলাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর জন্য মহিলারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্যও মহিলারা অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া তারা লক্ষীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন। যা মহিলাদের কাছে একটা শক্তি, মাসের শেষে তাদের হাতে হাজার টাকা থাকছে।” ঝুমা দেবীর কথায় মাসিক হাজার টাকা যে লক্ষীর ভাণ্ডার পাই, সেখান থেকেই এই বিউটি পার্লারের ঘর ভাড়া দিই।

পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমা কোরার বিউটি পার্লারে আসা এক কাস্টমার ঈশিকা মন্ডল বলেন, “যাবতীয় যা কিছু আমরা প্রধান দিদির কাছেই করাই । সত্যি বলতে আমাদের এটা ভেবে ভালো লাগে যে প্রধান দিদির কাছে ফেসওয়াশ, মুখের কোন ক্রিম বা কোনও জিনিস দরকার হলে সেটা আমরা পেয়ে যায় । বাড়ির কাছেই খুব ভালো লাগে এটা। সকাল বিকাল দুইবেলায় খোলা থাকে, পার্লারের যাবতীয় যা কাজ সব প্রধান দিদিই করে।”

মেমারি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও ড: এ এম ওয়ালি উল্লাহ জানান, “এটা খুবই ভালো ব্যাপার সম্ভবত এর আগে উনি মাঠে কাজ করতেন এখন বিউটি পার্লারে কোর্স করে উনি পার্লারটি চালাচ্ছেন এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। উনি একজন সৎ মহিলা , এখনো পর্যন্ত উনার বিরুদ্ধে করাপশনের কোনরকম কমপ্লেন আসেনি সৎভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।”

আরও পড়ুন ::

Back to top button