কুড়মিদের উচ্ছ্বাস থাকলেও শেষ পর্যন্ত জঙ্গলমহলে কিন্তু উঠল সবুজ ঝড়। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বেশিরভাগ আসনেই জয়ী হলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা।
ভোটের প্রচারে এবং ভোট গ্রহণের দিন যে ভাবে কুড়মিরা চাপ বাড়িয়েছিলেন, শাসক দলের ভোটের ফল প্রকাশের দিন মঙ্গলবার সকাল থেকে সেই চাপ কিন্তু সেই ভাবে দেখা গেল না। গণনা কেন্দ্রের বাইরে কুড়মি আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা ভিড় করেছিলেন ‘জয় গরাম’ পতাকা নিয়ে, কিন্তু একটার পর একটা ফল প্রকাশ হতেই দেখা যায় ঝাড়গ্রাম , জামবনি, গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, সাঁকরাইলের মত ব্লকগুলির বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা।
লক্ষ্যনীয় ভাবে হেরেছেন বেলপাহাড়ী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বুবাই মাহাতো। তিনি সন্দাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এছাড়া একক ভাবে কুড়মিরা ঝাড়গ্রাম ব্লকে দুধকুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত, লোধাশুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মত কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছেন।
তবে সার্বিক ভাবে জেলার বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। একইসঙ্গে একক ভাবে অনেক গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করে নিয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর ৭৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বোর্ড গঠন করবে তৃণমূল। তবে এদিন জেলার ৮ টি গণনা কেন্দ্রে সকাল থেকেই গণনা শুরু হলেও ফল আসতে বেশ দেরি হয়েছে। জানা যাচ্ছে সরকারি যে পোর্টালের মাধ্যমে ফল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়, সেই পোর্টালে কিছু ত্রুটি থাকায় কারণে সমস্যা হচ্ছিল।
পরবর্তী কালে আপলোড করতে বাড়তি সময় লাগে। এদিন গ্রাম পঞ্চায়েতের গণনা হয় দুটি রাউন্ডে এবং সেই গণনা শেষ করতে প্রায় বিকেল হয়ে যায়। পরবর্তী কালে বিকেলে পঞ্চায়েত সমিতির গণনা শুরু হয় এবং রাতের দিকে শুরু হয় জেলা পরিষদ আসনের গণনা। সার্বিক স্পষ্ট ফল পেতে বুধবার সকাল হয়ে যাবে।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, “এই ফল প্রত্যাশিত ছিল, জঙ্গলমহলের জন্য যে উন্নয়ন মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, এ ফল তাঁরই প্রমাণ।” অন্যদিকে কুড়মিরা বলছেন, তাঁরা সংখ্যায় কম হলেও ভোটের রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। তাঁরা যতটুকু যা পেয়েছেন সেটাও জাতি সত্তার আবেগ এবং আন্দোলনের ফল এবং কুড়মিরা মানছেন, সংঘবদ্ধভাবে ভোট করানোটা কঠিন কাজ তবে এত কম সময়ের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁরা যে ভাবে ভোট করিয়েছেন তার জন্য কুড়মিদের সাধুবাদ দিয়েছেন কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক ধর্মেন্দ্র মাহাতো।
অন্যদিকে, বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল ব্যাপক ছাপ্পা দিয়ে ভোট লুট করেছে, এই একই অভিযোগ করেছে সিপিএমও। সিপিএমও কয়েকটি আসনে জয়ী হয়েছে। তবে একক ভাবে তারা গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করতে পারেনি। সিপিএমের হাতে থাকা গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের সাতমা গ্রাম পঞ্চায়েতটি এবার হাতছাড়া হয়েছে। এছাড়াও লালগড়ে সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডের খাস তালুক ধরমপুর অঞ্চলের সব কটি আসনেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে।