Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
জানা-অজানা

বিগত ৮৮ বছরে ১১ দেশের নাম বদল

বিগত ৮৮ বছরে ১১ দেশের নাম বদল

বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে বিগত ৮৮ বছরে ১১টি দেশ নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছে। নাম পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট। একটি দেশের নাম পরিবর্তন তার পরিচয়, সার্বভৌমত্ব বা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রতীক হতে পারে।

আনুষ্ঠানিকভাবে একটি দেশের নাম পরিবর্তন করা সহজ নয়। উচ্চপর্যায়ের সরকারি আলোচনা, সংখ্যাগরিষ্ঠের ঐকমত্য এবং বিভিন্ন মতামতের প্রয়োজন। নাম পরিবর্তনেও ব্যয় হয় প্রচুর অর্থ। সঙ্গে লাইসেন্স প্লেট পরিবর্তন, সরকারি লেটারহেড এবং অফিসিয়াল স্বাক্ষর পরিবর্তন, সামরিক এবং ক্রীড়া ইউনিফর্মের পরিবর্তন এবং দেশীয় মুদ্রার পরিবর্তনের মতো অন্যান্য জটিলতাও রয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ বদলে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ ব্যবহার করায় নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আবার সামনে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া লোকসভার বিশেষ অধিবেশনে দেশের নতুন নামকরণের প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পারস্য থেকে ইরান
নাম পরিবর্তনের তালিকায় প্রথম দেশ ইরান। ২১ মার্চ ১৯৩৫ সালের ফার্সি নববর্ষে রেজা শাহ এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার দেশের নাম ‘পারস্য’ থেকে ‘ইরান’ রাখা হয়। তিনি অনুভব করেছিলেন, পারস্য নামটি খুবই ঔপনিবেশিক, প্রাচ্য এবং সেকলে।

আরও পড়ুন :: নারীর সঙ্গে নারীর বিয়েই যেখানকার রীতি

‘পারস্য’ নামটি যেন অতীতের কথা বলেছিল, ভবিষ্যতের কথা নয়। রেজা শাহ ছিলেন একজন আবেগপ্রবণ এবং দূরদর্শী সংস্কারক। নাম বদলের পর আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে ইরান।

সিয়াম থেকে থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ড ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ‘সিয়াম’ নামে পরিচিত ছিল। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান পশ্চিমা ঔপনিবেশিক প্রভাবের মুখে জাতির ঐক্য ও পরিচয় নিশ্চিত করা।

‘থাইল্যান্ড’ শব্দের অর্থ ‘স্বাধীনতার দেশ’। স্বাধীন দেশ নিয়ে থাই জনগণের গর্ববোধের ওপর জোর দেওয়ার জন্য এ নামটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান একটি নৃশংস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরই ‘বাংলাদেশ’ নামটি ঘোষণা করা হয়। ফলে বাংলাদেশের নতুন জাতি সৃষ্টি হয়। নাম এবং অবস্থার পরিবর্তন দুটি অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং রাজনৈতিক পার্থক্যকে প্রতিফলিত করে।

সিলন থেকে শ্রীলংকা
১৯৭২ সালে সিলন দ্বীপদেশটি তার নাম পরিবর্তন করে শ্রীলংকা রাখে। সিংহলি ভাষা থেকে উদ্ভূত এ শব্দ দেশটিকে মূলত ‘প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করে। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল দেশের বহু সাংস্কৃতিক পরিচয় প্রতিফলিত করা।

আরও পড়ুন :: যে গ্রামে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ প্রবেশ নিষেধ

আরও একটি কারণ ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এর ঔপনিবেশিক অতীতকে মুছে ফেলা। শ্রীলংকা মানে সিংহলি ভাষায় ‘আলোকিত ভূমি’ যা দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ওপরও জোর দেয়।

বার্মা থেকে মিয়ানমার
‘বার্মা’ নামে পরিচিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির নাম বর্তমানে ‘মিয়ানমার’। ১৯৮৯ সালে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার এ নাম রাখে। পরিবর্তনটি ব্যাপক আন্তর্জাতিক বিতর্ক এবং বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। কারণ নামটি ক্ষমতাকে বৈধ করার একটি প্রচেষ্টা হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।

চেকোস্লোভাকিয়া থেকে ‘চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়া’
১৯৯৩ সালে চেকোস্লোভাকিয়া বিলুপ্তির ফলে দুটি পৃথক দেশ তৈরি হয় : চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়া। এই শান্তিপূর্ণ বিচ্ছিন্নতা কমিউনিস্ট শাসনের সমাপ্তি তুলে ধরে। দুটি জাতিগোষ্ঠী, চেক এবং স্লোভাকদের মধ্যে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং আÍনিয়ন্ত্রণের আকাক্সক্ষা দমনের বিষয়টি তুলে ধরে এ নাম।

জায়ার থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো
১৯৯৭ সালে বেশ কিছু রাজনৈতিক উত্থান-পতন এবং সংঘর্ষের পর জায়ারের নাম পরিবর্তন করে ডেমোক্রেটিক ‘রিপাবলিক অব কঙ্গো’ রাখা হয়। পরিবর্তনটি দেশটিকে মোবুতু সেসে সেকোর কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসক হিসাবে দেশটিকে শাসন করেছিলেন। নতুন নামটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দিয়েছে।

চেক প্রজাতন্ত্র থেকে চেকিয়া
২০১৬ সালের এপ্রিলে কোম্পানি এবং ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর জন্য দেশের নামকরণের সুবিধার্থে চেক প্রজাতন্ত্রকে চেকিয়া নামে পরিবর্তন করা হয়েছিল। নামটি চূড়ান্তকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত ২০ বছর ধরে আলোচনায় ছিল।

সোয়াজিল্যান্ড থেকে এসওয়াতিনি
২০১৮ সালের এপ্রিলে আফ্রিকান দেশ সোয়াজিল্যান্ডের রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির নাম পরিবর্তন করে এসওয়াতিনি রাখার ঘোষণা দেন। তদ্ব্যতীত, আগের নামটি ‘সুইজারল্যান্ডের’ সঙ্গে অনেকটা মিল থাকার কারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করত। ফলে এসওয়াতিনি নামটি পালটানোকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছে।

ম্যাসেডোনিয়া থেকে উত্তর ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র
২০১৯ সালে যখন ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র উত্তর মেসিডোনিয়া নামে নামকরণ করা হয়। নামের পরিবর্তনটি গ্রিসের সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের সমাধান করেছিল। এছাড়া এটি একটি কূটনৈতিক চুক্তির অংশ যা উত্তর মেসিডোনিয়ার ন্যাটো সদস্যপদ লাভের পথকে সহজ করেছিল এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করেছে।

তুরস্ক থেকে তুর্কি
২০২১ সালে তুরস্ক থেকে তুর্কি নামটি পরিবর্তন হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান দেশটির নাম টুইট করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে তুর্কি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।

তার মতে, এ সিদ্ধান্তটি জনসাধারণ এবং বিদেশি দেশগুলোতে তাদের ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে প্রদর্শন করে। ‘তুর্কিয়ে’ শব্দটি দেশের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং সভ্যতাকে সবচেয়ে ভালোভাবে উপস্থাপন করে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button