আমফানের দুর্যোগে পাশে দাঁড়াননি পড়শিরা, ঝাড়গ্রামে মৃত বৃদ্ধের সৎকারে এগিয়ে এলেন যুব তৃণমূলের নেতা
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরার বাসিন্দা বৃদ্ধ মলয় কর্মকার। জনস্বাস্থ্য দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী মলয়বাবুর মৃত্যুর পরে আম্ফুনের প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে তাঁর সৎকার কীভাবে করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তাঁর ছেলে নিলাব্জ। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে এলেন ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাহাতো।
যুব-নেতার উদ্যোগে বুধবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের তালতলা শ্মশানে মলয়বাবুর সৎকার হল। গত ১৮ মে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মলয়বাবু। তাঁর ভাই তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান। মলয়বাবুর ছেলে নিলাব্জ পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এলাকার একটি ব্যাঙ্কের কর্মী। তবে নিলাব্জ স্ত্রী ও ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন কলকাতার বাইপাসের কাছে। লকডাউনের আগে মলয়বাবুর স্ত্রী ঝর্ণাদেবী কলকাতায় ছেলের কাছে গিয়ে আটকে যান। তাঁরা ঝাড়গ্রামে ফিরতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মলয়বাবু। নিলাব্জকে ফোন করে বাড়ি ফিরে আসার জন্য বার বার তাগাদা দিতেন ময়লবাবু। নিলাব্জ জানালেন, ঝাড়গ্রামে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই কারণে ফিরতে পারছিলেন না।
মলয়বাবু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় নিলাব্জ ঝাড়গ্রামে ফেরার অনুমতি জোগাড় করার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মঙ্গলবার গভীর রাতে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মলয়বাবু। হাসপাতাল থেকে দেওয়া মলয়বাবুর ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পরে অবশ্য প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়া যায়। বুধবার ঝাড়গ্রামে সপরিবারে ফেরেন নিলাব্জ। কিন্তু প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে পরিবারটির পাশে কেউই দাঁড়াননি। পাড়ার কয়েকজন আবার রটিয়ে দেন মলয়বাবু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, কর্মকারদের বাড়ি স্যানিটাইজ করা হয়েছে। এই অবস্থায় কেউই আর তাঁদের বাড়িতে যাননি।
তবে ঘটনার কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাহাতো। তাঁর উদ্যোগে মলয়বাবুর সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। শববাহী গাড়িতে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তালতলা শ্মশানে। প্রবল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও যুব তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী ও কয়েকজন সহৃদয় যুবকের সাহায্যে দেহটি সৎকার করা হয়। নিলাব্জ বলেন, ‘‘বিপদের দিনে যেভাবে অজিতদা ও তাঁর সহযোগীরা পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করলেন, সেটা কোনোদিনও ভুলব না।’’