ঝাড়গ্রাম

কেন ঝাড়গ্রাম থেকে চলে যাচ্ছেন স্বামী শুভকরানন্দ, প্রশ্ন তুললেন অনুরাগীরা

কেন ঝাড়গ্রাম থেকে চলে যাচ্ছেন স্বামী শুভকরানন্দ, প্রশ্ন তুললেন অনুরাগীরা

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: আদিবাসীদের সরকারি হতশ্রী স্কুলটির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন স্বামী শুভকরানন্দ। অথচ তাঁকেই ঝাড়গ্রাম থেকে চলে যেতে হচ্ছে। শনিবার শুভকরানন্দ মহারাজের বিদায় সংবর্ধনা সভায় প্রশ্ন তুললেন তাঁর অনুরাগী বিশিষ্টজনেরা।

ঝাড়গ্রাম একলব্য আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ে একসময় চরম দুর্দশার মধ্যে থাকত আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। স্কুলটির মানোন্নয়নের জন্য বহু আন্দোলন করেছিলেন অভিভাবকেরা। ২০১৬ সালে অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ দপ্তর ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের অধীনে থাকা স্কুলটির দায়িত্ব বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেয় রাজ্য সরকার। ওই বছরেই বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ শুভকরানন্দ মহারাজকে স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে পাঠান। ঝাড়গ্রামের একলব্য স্কুলটি এখন রাজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি খরচে মিশনের তত্ত্বাবধানে এই স্কুলে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা। গত তিন বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল করে নজর করেছে এই স্কুলের পড়ুয়ারা। স্কুলের প্রাক্তনীরা এখন আইআইটি-র মত প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা লাভ করছে।

প্রশাসনের আধিকারিকদের মতে, এই উত্তরণের যাবতীয় কৃতিত্ব শুভকরানন্দ মহারাজের। কিন্তু সব ভালোর মধ্যেও সমালোচনা থাকে। এই স্কুলে বিশৃখলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে প্রাক্তন টিচার ইনচার্জকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। শুভকরানন্দ মহারাজের বিরুদ্ধে একসময় নানা ধরণের অপপ্রচারও করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার কারণে তিনি মানসিক ভাবে খুবই আঘাত পান। তবে সন্ন্যাসীর জীবনে থেমে থাকার কোনও অবকাশ নেই। স্কুলটির উন্নতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। স্কুলের পাশে রাজ্য সরকারের দেওয়া ৫ একর জমিতে শুভকরানন্দ মহারাজের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে মিশনের ঝাড়গ্রাম শাখার প্রার্থনা সভাঘর। মঠ-মিশনের আশ্রিতরা সেখানে নিয়মিত যান। শুভকরানন্দ মহারাজ মিশনের ঝাড়গ্রাম শাখার প্রথম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। করোনা পরিস্থিতির কারণে অসহায় মানুষজন ও আমফান দুর্গতদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন শুভকরানন্দ মহারাজ। কিন্তু আচমকা তাঁকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে ত্রিপুরার আগরতলা মিশনে।

কেন ঝাড়গ্রাম থেকে চলে যাচ্ছেন স্বামী শুভকরানন্দ, প্রশ্ন তুললেন অনুরাগীরা

শনিবার একলব্য স্কুলের উদ্যোগে বিবেকানন্দ সভাঙ্গনে এক ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে শুভকরানন্দ মহারাজকে বিদায়-সম্ভাষণ এবং মিশনের ঝাড়গ্রাম শাখার নতুন সম্পাদক স্বামী বেদপুরুষানন্দ মহারাজকে অভ্যর্থনা জানানো হল।

আরও পড়ুন : বিদায় বেলায় ফ্রেমবন্দি সন্ন্যাসীর ছবি উপহার দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন সরকারি আধিকারিক

ওই সভায় ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডিমীর অধ্যক্ষ সঞ্জীব মিত্র বলেন, আমরা চাই আগরতলার দায়িত্ব পালন করে সাড়ে তিন বছর পরে আবার শুভকরানন্দ মহারাজ ঝাড়গ্রামে আসুন। কেন এভাবে মহারাজকে চলে যেতে হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সঞ্জীববাবুর মত অনেকেইম প্রাক্তন স্বাস্থ্যকর্মী তথা মিশনের আশ্রিত স্বপ্না দাস অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, শুভকরানন্দ মহারাজের জন্যই আজ একলব্য স্কুলটি একটি উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্কুলের প্রতিটি কোণায় তাঁর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে।

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানী শুভকরানন্দ মহারাজের হাতে প্রশাসনের তরফে উপহার তুলে দিয়ে বলেন, আমরা চাইব, মহারাজ মাঝে মাঝেই ঝাড়গ্রামে আসুন। শুভকরানন্দ মহারাজ কৌতুক করে বলেন, আমার যাতায়াতের খরচ যোগাবে কে? জেলাশাসক তখন বলেন, মহারাজ আমরাই খরচ দেব।
অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার আমিতকুমার ভরত রাঠোর, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) পীযূষ গোস্বামী, অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ বিভাগের জেলা প্রকল্প আধিকারিক পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়, মহকুমাশাসক (সদর) সুবর্ণ রায়, ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা সরেন প্রমুখ।
তবে শুভকরানন্দ মহারাজের আচমকা ঝাড়গ্রাম থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার খবরে বিস্মিত তাঁর অনুরাগীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এই সন্ন্যাসীর বদলি নিয়ে তাই নানা মহলে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button