ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামে সেনগুপ্ত বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুজোয় দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা আনাজ

স্বপ্নীল মজুমদার

ঝাড়গ্রামে সেনগুপ্ত বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুজোয় দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা আনাজ

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় সেনগুপ্ত পরিবারের আবাসস্থল ‘রজনীকুটির’। ১৯৪৮ সাল থেকে এ পার বাংলায়, এই বাড়িতেই শুরু হয় সেনগুপ্তদের পারিবারিক দুর্গাপুজো। আগে পুজো হত ফরিদপুরের বান্ধব-দৌলতপুর গ্রামে। সেখানেই ছিল সেনগুপ্তদের আদি ভদ্রাসন।

১৭৫২ সালে, প্রখ্যাত কবিরাজ রামগতি সেনগুপ্তর আমলে ফরিদপুরের পুজোয় জৌলুস বাড়ে। দেশভাগের পর, ১৯৪৮ সালে রামগতি সেনগুপ্তর উত্তরসূরিরা ঝাড়গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। তবে পূর্ববঙ্গের বসতবাটি ছেড়ে এলেও পুজো ছাড়তে পারেননি তাঁরা। পুজোর বয়স তাই তিনশো পেরিয়েছে।

সেনগুপ্ত পরিবারের সদস্য দীপঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “এক সময় লাগাতার বর্গি হামলার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষেরা আত্মগোপন করে পুজোর আয়োজন করতেন বলে শুনেছি। ওই অবস্থায় ভোগ রাঁধার সুযোগ হতো না। ‘ভোগ’ হিসেবে কাঁচা আনাজ নিবেদন করা হত। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।”

তাই এখনও রান্না করা অন্নভোগ হয় না। পরিবর্তে দেবীকে নিবেদন করা হয় কাঁচা শাকসব্জি, চাল, ডাল ও মশলাপাতি। দেওয়া হয় ফল, খই, মুড়কি ও নারকেল নাড়ুর নৈবেদ্যও। আগে পুজোয় তিন দিন— সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে ছাগবলি দেওয়া হত। ১৯৯২ সাল থেকে পশুবলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ‘পাগল ছাগলে কি বলল কিছু যায় আসে না’, ফের বিজেপিকে তোপ অনুব্রতর

একচালার প্রতিমার বিশেষত্ব হল, দুর্গার ডান দিকে লক্ষ্মীর পাশে থাকেন কার্তিক এবং বাঁয়ে সরস্বতীর পাশে থাকেন গণেশ। কেন এই পরিবর্তন তা পরিবারের সদস্যদের অজানা। দীপঙ্করবাবু বলেন, “পূর্ববঙ্গে যেমন প্রতিমা হত, ঝাড়গ্রামেও অনুরূপ প্রতিমা তৈরি করানো হয়। গণেশ-কার্তিকের এই অবস্থানগত পরিবর্তনের কারণ আমাদের জানা নেই।”

পরিবারের প্রবীণা গৃহিনী আলো সেনগুপ্ত বলেন, “বাড়ির বেশির ভাগ সদস্যই কলকাতা কিংবা বাইরে থাকেন। আমিও কলকাতায় থাকি। তবে পুজোয় সবাই এখানে চলে আসি। ক’টা দিন হৈচৈ করে কেটে যায়।” অসুস্থ শরীরেই পুজোর টানে প্রতি বছর আসেন আলোদেবী। এবার করোনা আবহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজোর আয়োজন হচ্ছে।

ফরিদপুরে পুজোর সময় যাত্রা, কবিগান ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসতো। আতসবাজির রোশনাই নজর কাড়ত আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষের। সেই দিন আর নেই। আড়ম্বর গিয়েছে, তবে ঐতিহ্য আর আন্তরিকতা আজও অম্লান রয়েছে সেনগুপ্ত বাড়ির পুজোয়।

আরও পড়ুন ::

Back to top button