ঝাড়গ্রাম: ২০০৮ সালের পর ২০২০। মাঝে ব্যবধান এগারো বছরের। প্রায় একযুগ পরে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বাঁদনা পরবে সামিল হলেন জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা তথা তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো।
পরবের দ্বিতীয় দিন রবিবারে ‘গোহাল পূজা’ উপলক্ষে ফেসবুকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ছত্রধর। করোনা আবহে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব পালনের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এদিন মাথায় পাগড়ি ও হলুদ রঙের আদিবাসী প্রথার গামছা পরে সনাতনি পোশাকে নিজের গোয়ালে পুজো করেন ছত্রধর। তারপর ওই পোশাকেই ভিডিয়ো বার্তা দেন তিনি।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর জানান, এগারো বছর পরে নিজের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উৎসবের দিনে থাকতে পারে তিনি ভীষণই খুশি ও আবেগতাড়িতও।
বাম আমলে ২০০৮ সালে বাঁদনা পরবের কয়েকদিন পরেই শুরু হয়েছিল লালগড়ের আন্দোলন। যা ক্রমে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা জঙ্গলমহলে। সেই আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন ছত্রধর।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতায় এলে বাংলাকে গুজরাত বানাব’: দিলীপ ঘোষ
একদিকে, আদিবাসী মূলবাসীদের স্বাধিকার ও উন্নয়নের দাবিতে ছত্রধরের ‘গণন্ত্রান্ত্রিক’ আন্দোলন, অন্যদিকে মাওবাদীদের রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসে কেঁপে উঠেছিল সেদিনের জঙ্গলমহল। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে মহাষ্টমীর দুপুরে লালগড়ের বীরকাঁড় গ্রাম থেকে গ্রেফতার হন ছত্রধর।
ইউএপি সহ রাষ্ট্রদ্রোহ, খুন, অপহরণ, নাশকতার ৩০ টিরও বেশি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। দীর্ঘ কারাবাস কালে ইউএপি মামলাটি বাদে বাকি সব মামলায় জামিন পেয়ে যান তিনি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে গত বছর ছত্রধরের মুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।
এরপর হাইকোর্ট ইউএপি মামলায় সাজার মেয়াদ কমানোয় জেলমুক্ত হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লালগড়ের বাড়িতে ফেরেন ছত্রধর। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদকের পদ পান। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ পুরোনো দু’টি মামলায় ছত্রধরের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে।
মামলায় ইউএপি ধারা যুক্ত করে ছত্রধরকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিতে চেয়েছিল এনআইএ। বিশেষ আদালতের নির্দেশে অবশ্য গ্রেফতারি এড়িয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক। তাই স্বস্তিতে রয়েছেন তিনি।
ছত্রধর এদিন বলেন, “২০০৮ সালের পরে আর বাঁদনা পরবে যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই এবার পরবে যোগ দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে।”