‘গোপাল বাড়ি’ বললেই একডাকে সবাই চেনেন। বাড়ির মালিক চিত্তরঞ্জন মজুমদার অবসরপ্রাপ্ত বিএসএনএল কর্মী। ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরা এলাকার বাসিন্দা চিত্তবাবুর বাগানের দৌলতে এলাকার প্রায় সকলেই একডাকে চেনেন তাঁর ‘গোলাপ বাড়ি’।
শুধু তাঁর বাগানে প্রতিবছর ফোটে কয়েক হাজার নানা ধরনের রং বেরঙের গোলাপ ফুল। ‘গোলাপ-বিশেষজ্ঞ’ও তিনি। বাড়ির সামনের উঠোনের গোলাপ বাগান, পিছনে রয়েছে আনাজ বাগান এবং ফলের বাগান। আর ছাদে অজস্র টবে রয়েছে নানা ধরনের বনসাই ও অর্কিড। এছাড়া ছাদের ঘরে মাশরুম চাষও করেন তিনি।
আরও পড়ুন : চিল্কিগড়ে কেক কেটে হনুমানসেবার বর্ষপূর্তিতে হাজির বিচারক-সহ বিশিষ্টজন
কর্মসূত্রে ঝাড়গ্রামে এসে এক সময় বিশিষ্ট গোলাপ বিশেষজ্ঞ সুবিমল চন্দ্র দে-র সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। সুবিমলবাবুর পরামর্শে অবশ্য টবে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ফলাতে শুরু করলেন চিত্তরঞ্জন। এক বন্ধুর কাছে শেখেন টবে অর্কিড ও বনসাই তৈরির পদ্ধতি। ভাড়া বাড়িতে চিত্তবাবু ও তাঁর স্ত্রী তাপসীদেবী টবে গেঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, পপি, পেনজি, পিটুনিয়া ফোটাতে শুরু করেন।
১৯৯৭ সালে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে এলেন ঝাড়গ্রাম টেলিফোন কেন্দ্রের সরকারি আবাসনে। আবাসনের প্রশস্ত উঠোনে শুরু করলেন গোলাপের বাগান। অবসর নেওয়ার চার বছর আগে ২০১২ সালে ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াধরা এলাকায় নিজের বাড়ি তৈরি করে উঠে আসেন চিত্তবাবু। দোতলা সেই বাড়ির সামনের জমিতে কয়েকশো প্রজাতির রাশি রাশি গোলাপের বাগান বানিয়ে ফেলেন মজুমদার দম্পতি। বাড়ির সামনে উঠোনের মাটিতে গোলাপ ফুলের অজস্র গাছ। ‘মহাঋষি’, ‘তাজমহল’ ‘গার্ডেন অফ দা ওয়ার্ল্ড’, ‘প্রিন্সেস ডি মনাকো’, ‘হোয়াইট মাস্টার পিস’, ‘সিটি অফ জয়’-এর মতো নানা প্রজাতির গোলাপ রয়েছে চিত্তরঞ্জনের বাগানে। বাড়ির পিছনের বাগানে আনাজ ও ফলের গাছ রয়েছে। আঙুর, আম, আপেল-কুল, কমলালেবুর পাশাপাশি, পটল, ঢেঁড়শের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় আনাজেরও চাষ করেন মজুমদার-দম্পতি। এ ছাড়া টবে চল্লিশটি নানা ধরনের বনসাই ও তিরিশটি অর্কিডও রয়েছে। যেগুলির বেশির ভাগই দুষ্প্রাপ্য।
আরও পড়ুন : অরণ্যশহরে সুখাদ্যের মরুদ্যান ‘ওয়েসিস রেস্তোরাঁ’
২০১৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। ৬৪ বছর বয়সেও প্রাণশক্তিতে ভরপুর তিনি। চিত্তবাবুর একমাত্র ছেলে অভিষেক কর্মসূত্রে শিলংয়ে থাকেন। জেলার বিভিন্ন পুষ্প প্রদর্শনীতে প্রতি বছরই পুরস্কার পান চিত্তবাবু। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম শহরের সবুজ ফেরাতে নীরবে কাজ করে চলেছেন। বিভিন্ন গাছের বীজ নিয়ে গিয়ে জঙ্গলে কিংবা ফাঁকা জায়গায় পুঁতে দিয়ে আসেন। সেগুলিকে জল দিয়ে চারা তৈরি করেন। চিত্তবাবুর রোপণ করা এ রকম বহু গাছ ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বড় হয়ে ছায়া দিচ্ছে, ফল দিচ্ছে।