জীবনে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন বন্ধুদের সহায়তা
মৃত্যুঞ্জয় সরদার
সমাজের অত্যাচার শব্দটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আমরা সবাই যেন জড়িয়ে রয়েছি।সমাজব্যবস্থা নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করেছিলেন সমাজের সেই সময়কার মাথারা।সামাজিক রীতিনীতি বর্তমান বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার এর মধ্যে মতানৈক্য ফারাক রয়েছে।প্রত্যেকটা মানুষের নিজস্ব মতামত ও স্বাধীনতার সত্তা নিজের জীবনে লুকিয়ে রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন সাধারণ মানুষের কপালে একটা চিন্তার ভাঁজ পড়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও এ সমাজকে তেমনভাবে চিনতে পারিনি, তবে নিজের জীবনের কয়েকটি দুর্ঘটনা প্রীতি কে সামনে রেখে, নিজে বারবার সমাজের যে রীতি রেওয়াজ আছে সেটার উপরে উপলব্ধ করার চেষ্টা করেছি এককথায় গবেষণা চালিয়ে গেছি। একটা জিনিস বারবার উপলব্ধি করেছে মানুষের ভালোর জন্য সমাজের ন্যায়নীতি প্রথা প্রচলন হয়েছে। তারপরেও মানুষ এতটা খারাপ কেন? এই সমাধান আজকের দিনেও আমি পাইনি! মানুষেরসংবিধান রয়েছে যা মানুষের স্বার্থে ব্যবহার হয়।এরপরেও মানুষকে কেনই বা অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে, কেনইবা নিজের জীবন বাজি রেখে এত আন্দোলনে শামিল হতে হচ্ছে। কেনইবা শত অত্যাচারের পরেও ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। কেনই বা এই সমাজের এত মানুষ খুন হতে হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আজও মেলে না। আমি নিজেই এসব কিছু ভুক্তভোগী। আমি পড়াশুনা শেষে অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য সহজ উপায়ে ভারতবর্ষের সংবিধান কে সামনে রেখে, নিজে হাতে কলম তুলে নিয়েছিলাম সমাজ সংস্কারের আশাতে। ১৬ বছর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখতে লিখতে আজকের দিনের সৌভাগ্য হয়েছে যে বিশ্বের দরবারে আমার লেখাটা পৌঁছে দিতে পারছি।
এই অনলাইনে যুগে বিশ্বের মানুষ বিশ্বের বাঙালি হয়তো এই বাংলায় কিছু কথা আমার মাধ্যমে জানতে পারছে। এর ফলে যে মানুষগুলো আমি আপন মনে করে বিশ্বাস করতাম, তারা একের পর এক আমার ক্ষতি করে গেছে। প্রতিটি মানুষ জীবনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়াটা হচ্ছে নিজেই একমাত্র চাবিকাঠি সে কথা প্রসঙ্গে আজ আমি চাণক্য নীতির কথা তুলে ধরতে চলেছি। জীবনে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন বন্ধুদের সহায়তা৷ কিন্তু সেই পথে মানুষ অনেক সময়ই চিনতে পারেনা কে সত্যিকারের বন্ধু আর কে শত্রু৷ আমরা সবাই কোন না কোন সময়ে, ভেবে বা না ভেবে, ভুল করে হলেও অনেক সময় সমাজের স্বার্থপর, লোভী, খারাপ মানুষদের সাথে, বা তাদের বাইরের রূপ অথবা ব্যবহার দেখে বন্ধুত্ব করি। কিন্তু আমাদের ভুল তখন ভাঙ্গে, যখন তারা আমাদের ক্ষতি করে। আমাদের বোকা বানিয়ে চলে যায়। আমরা ভাবি এটা যদি আগে বুঝতে পারতাম, এই মেয়েটির বা ছেলেটির আসল রূপ এত নোংরা, তাহলে হয়তো আমাদের এতটা কষ্ট, এতটা ক্ষতি হত না। কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই, মহামতি চাণক্য এমন কিছু নীতি, এমন কিছু পদ্ধতি বলে গেছেন, যদি সেই নীতি বা পদ্ধতিগুলি মন দিয়ে বুঝে, নিজেদের জীবনে ব্যবহার করতে পারা যায়,সে নীতি অনুসরণ করে আমি আমার ভাষাতে মানুষ চেনার সহজ উপায় কথাগুলো তুলে ধরতে চাই।
আমরা সবাই জানি,একজন মানুষ সত্যিকার প্রেমী তখনই হয়, যখন সে তার প্রেমের জন্য সব কিছু করতে পারে। এমনকি নিজের জীবনকে পর্যন্ত তুচ্ছ ভাবতে পারে। যেমন ধরা যেতে পারে একটা মৌমাছি। একটা কালো মৌমাছির যা শক্তি আছে, তাতে সে শক্ত জিনিস ভেদ করতে সক্ষম। কিন্তু সেই মৌমাছি যখন একটা পদ্মফুলে আটকে যায় এবং সেখান থেকে বের হবার ক্ষমতা থাকলেও সে বের হয় না। দেখা যায়, সে নরম ফুলের পাপড়ি ছেড়ে বেরোতে পারছে না। এর কারণ হলো, সে জলাশয়ের ফুটে থাকা পদ্মফুলটিকে অনেক ভালোবাসে। যার কারণে সে চায়না এই সুন্দর ফুলের কোন ক্ষতি হোক। সে ভাল করেই জানে, এভাবে আটকে থাকলে তার মৃত্যু ঘটতে পারে। কিন্তু সে তার প্রাণের পরোয়া না করে, তার ভালোবাসার জন্য নিজের প্রান ত্যাগ করতেও রাজি আছে। ঠিক সেইভাবে, যে ব্যক্তি তার জীবনের জন্য ত্যাগের ভাবনার আছে, সেই ব্যক্তি আপনাকে সত্যিকারে ভালোবাসে।
আরও পড়ুন : পরাধীনতার জালে সম্পর্কের রসায়ন
এরকম চিন্তার মানুষ কখনো আপনার বিশ্বাস ভাঙবে না। তবে এটাও ঠিক প্রেমের জন্য জীবন দিয়ে দেওয়া কখনই উচিত না। আত্মহত্যা একটা নিকৃষ্ট কাজ এবং এই মহা পাপের কাজ একদমই করা ঠিক না। চানক্য, এখানে নিজের জীবন দিতে না, জীবন দিয়ে দেওয়ার মত ভাবনার কথা বলেছেন। মানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, নিজের প্রাণের চেয়েও আপনি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ভালবাসুন। পাশাপাশি অপরদিকে এমন মানুষ রয়েছেন, যারা ভালোবাসা বলতে শুধু শরীর বোঝে, তাদেরকে আপনার চিনতে হবে। নয়তো এমন এক দিন আসবে, যখন তারা দেখবে, টাকা পয়সা নেই আপনার কাছে, এবং আপনি তার বা তাদের চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম, তখন সে বা তারা একবারের জন্য আপনার কথা না ভেবে আপনাকে ফেলে চলে যেতে একবারও ভাববে না। সেই সমস্ত ভালো মানুষের মুখোশধারী লোকগুলোকে খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায় এবং সেটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই। যদি আমরা সেই মুখোশধারী মানুষদের চিনে ফেলতে পারি, তাহলে তারা আমাদের কোনভাবেই ঠকাতে পারবে না। আর যদি আপনি কোন জায়গায়, যে কোন কাজে কখনো না ঠকেন, তাহলে সফলতা আপনার হাতের মুঠিতে আসতে বাধ্য। আমাদের চলার রাস্তায়, অজানা শত্রু আমাদের অজান্তে কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এই কথার উপরে ভিত্তি করে আমার আজকের দিনে আরও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক চর্চার কথা, এদিকে কূটনৈতিক চর্চা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে নামটি আজও বর্তমান প্রজন্মের কাছে জ্ঞানের আঁতুরঘর হিসাবে চিহ্নিত তা হল কৌটিল্যের “অর্থশাস্ত্র” নামক বইটি। হ্যাঁ কৌটিল্য যিনি চাণক্য নামেও পরিচিত। এই চাণক্য নীতি প্রাচীনযুগে সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য-এর সময় কালে তৈরি। চাণক্য ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও তাঁর ছেলে বিন্দুসারের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান স্তম্ভ। চাণক্য নীতি প্রথম দেখায় কীভাবে রাজনীতি ও কূটনীতি পরিপূরক হয়ে জীবনের সেরা দর্শন রূপে সফল ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায়।
চাণক্য তাঁর নীতি কথা দ্বারা ভারতে প্রথম কূটনৈতিক ধারণার জন্ম দেন। আজ আমরা তাঁর বিখ্যাত কিছু বাণী ও উপদেশ পড়ব যা আমাদের জীবনে সাহস ও সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এমনই দুর্ঘটনা বা বন্ধ তৈরি করার আগেই বা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আগে, চাণক্য নীতি ভালো করে জেনে নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমি। সেই কারণেই চাণক্যের উত্থান কিংবদন্তি গল্প হলেও ঐতিহাসিক সত্যতা আছে বলেই মানেন অধিকাংশ ঐতিহাসিক। সে সময় মগধ রাজ্যের পরাক্রমশালী নন্দ বংশের শেষ রাজা ছিলেন ধনানন্দ। তিনি ন্যায়বিচারক ছিলেন না। তার অন্যায় শাসনের জন্য প্রজাদের কাছে দারুণ অপ্রিয় ছিলেন। এই ধনানন্দ একবার চাণক্যকে অপমান করেন। ধনানন্দের পিতৃশ্রাদ্ধে পৌরহিত্য করার জন্য একজন ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়লে ধনানন্দের মন্ত্রী শকটা ব্রাহ্মণ খোঁজার দায়িত্ব নেন। তিনি চাণক্যকে ধনানন্দের পিতৃশ্রাদ্ধের পুরোহিত হওয়ার অনুরোধ জানান। সে অনুযায়ী চাণক্য যথাসময়ে রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হয়ে পুরোহিতের আসন গ্রহণ করেন। চাণক্যের চেহারা তেমন ভালো ছিল না।
পুরোহিতের আসনে কদাকার ব্রাহ্মণ চাণক্যকে দেখে মহারাজ ধনানন্দ গেলেন রেগে। অযথাই চাণক্যকে তিরস্কার করে বের হয়ে যেতে বলেন। চাণক্য প্রথমে মহারাজাকে হিতবাক্যে বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাজা ধনানন্দ কিছু না শুনে উল্টো অন্যদের দিয়েও চাণক্যকে অপমান করেন। এবার ক্রুদ্ধ হলেন চাণক্য। সেখান থেকে চলে আসেন এবং এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। অন্যদিকে রাজা ধনানন্দের সত্ভাই (পিতা মহাপদ্মের ঔরসে দাসী ‘মুরা’র গর্ভজাত) পদস্থ ও উচ্চাভিলাষী তরুণ সামরিক কর্মকর্তা চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসন দখলের পরিকল্পনা করছিলেন। কারণ পিতা মহাপদ্মের মৃত্যুর পর রাজা ধনানন্দ দাসীমাতা মুরা ও সত্ভাই চন্দ্রগুপ্তকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অপমানিত চন্দ্রগুপ্ত তাই ধনানন্দকে পরাজিত করে মগধের সিংহাসন দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হলে প্রাণ বাঁচাতে তাকে বিন্ধালের জঙ্গলে পলাতক ও নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়। তখনই ঘটনাচক্রে চাণক্যের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাৎ যে ইতিহাসের বাঁক বদলে দেবে কে জানত?চাণক্য চন্দ্রগুপ্তের প্রতিশোধপরায়ণতা আর সিংহাসনের বাসনাকে কাজে লাগাতে চাইলেন।
আরও পড়ুন : আজীবন যৌবন ধরে রাখতে সপ্তাহে মাত্র ১ বার ব্যবহার করুন ……
অন্যদিকে চন্দ্রগুপ্তও চাণক্যের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হলেন। ফলে চন্দ্রগুপ্ত তার জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য চাণক্যকে গুরু, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণাদাতা হিসেবে স্বীকার করেন। এরপর চাণক্যের সক্রিয় সহযোগিতায় চন্দ্রগুপ্ত একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে পরিকল্পনাকে আরও বেশি নিখুঁত করে তোলেন চাণক্য। চাণক্যের পাণ্ডিত্য আর চন্দ্রগুপ্তের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত সিংহাসনচ্যুত হলেন নন্দরাজা। মগধের সিংহাসনে আরোহণ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশই পরবর্তীতে ভারতীয় ইতিহাসে শক্তিশালী মৌর্য সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়। আর এই চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যেরই দ্বিতীয় পুরুষ হচ্ছেন বিন্দুসারা এবং তৃতীয় প্রজন্ম আরেক প্রতাপশালী শাসক সম্রাট অশোক। তিনিও ভারতবর্ষের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন।
বৈচিত্র্যময় জীবন
চন্দ্রগুপ্ত মগধের সিংহাসনে আরোহণ করার পর পাটালিপুত্রকে তার রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। এই পাটালিপুত্র বিহারের আধুনিক শহর পাটনার কাছেই অবস্থিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৯৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্রগুপ্ত রাজ্য শাসন করেন। তার সময়কালে রাজ্যজুড়ে শান্তি বিরাজমান ছিল, প্রজাদের প্রতি তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ এবং রাজ্য বিকশিত হয়েছিল সমৃদ্ধিতে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে গেছেন চন্দ্রগুপ্তের দরবারে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তার ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে। চাণক্য তার জীবদ্দশায়, এমনকি মৃত্যুর পরও ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও পণ্ডিত হিসেবে সর্বজনশ্রদ্ধেয় একটি অবস্থান ধরে রেখেছেন। টিকে আছেন তার কর্মবহুল জীবনের কর্ম ও সৃষ্টির মাধ্যমে। কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি পাঞ্জাবকে বিদেশি শাসনমুক্ত করতে রাজাকে সাহায্য করেন। এরপর অযোগ্য শাসক নন্দ রাজাকে উত্খাত করে চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের সঙ্গে আরও রাজ্য যুক্ত করেন এবং সাম্রাজ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তার ভূমিকা পালন করেন। কেবল চন্দ্রগুপ্তের আমলই নয়, পরবর্তীকালের ভারতীয় সম্রাটদের শাসন কৌশলে দারুণভাবে প্রভাব পড়ে চাণক্য নীতির। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে মৌর্য বংশের তৃতীয় শাসক সম্রাট অশোকের শাসন। এই সময়টি এতটাই পরিশীলিত ছিল যে বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামেও প্রাচীন ও গভীর ঐতিহ্যবাহী অশোক-স্তম্ভের উপস্থিতি রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : গুগল সার্চে যৌনতা নিয়ে বেশি খোঁজা হয় যেসকল প্রশ্ন
এমনকি এরও পরে বিক্রমাদিত্যের শাসনকালের কিংবদন্তীয় উপকথাগুলোর জনপ্রিয় লোকভাষ্য থেকেও তা ধারণা করা যায় হয়তো। এই বিজ্ঞ ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন দার্শনিক ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, সামাজিক আচরণ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করেছেন। চাণক্যের কথাগুলো আধুনিক যুগের পরিশীলিত কথাবার্তা থেকে ভিন্ন হলেও আজকের দিনেও ঠিক একই তাৎপর্য বহন করে।এরকম জ্ঞানী একটা মানুষ কিন্তু শারীরিকভাবে খুব একটা সবল ছিলেন না। দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। তবে সব ছাপিয়ে এই বিজ্ঞ ও বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন পণ্ডিতের সমাজ, সংসার, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি সম্পর্কিত নীতি কথাগুলো হাজার বছর পরেও গুরুত্ব হারায়নি।চাণক্যের জন্ম ইতিহাস জানতে গেলে এ কথাটা আজকের দিনে লেখা উচিত বলে মনে করছি। বহু ইতিহাস পাঠ্যপুস্তক চাণক্য জন্ম ইতিহাস সঠিক তথ্য আজও আমার কাছে মিলেনি। তবে চাণক্য [খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০ থেকে ২৮৩ অব্দ] ছিলেন প্রাচীন ভারতের পণ্ডিত, দার্শনিক ও রাজ উপদেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রাচীন তক্ষশীলা বিহারের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ছিলেন। মৌর্য রাজবংশের প্রথম রাজা চন্দ্রগুপ্তের রাজক্ষমতা অর্জন ও মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। দার্শনিক প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক পরিকল্পনায় সিদ্ধহস্ত এই অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষটির জন্ম বর্তমান পাকিস্তানের তক্ষশীলায়, যেখানে উপমহাদেশে উচ্চতর জ্ঞান আহরণের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপীঠ অবস্থিত ছিল। রাজনৈতিক দর্শনের বাস্তব চর্চা ও রাষ্ট্রীয় কৌশলের প্রয়োগপদ্ধতির নির্দেশনা দানে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসে তার অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। মহাজ্ঞানী চাণক্যের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল বিষ্ণুগুপ্ত। এ ছাড়া তার বিখ্যাত ছদ্মনাম ‘কৌটিল্য’। আবার কারও কাছে তার নামই বিষ্ণুগুপ্ত। কৌটিল্য নামেই তিনি সংস্কৃত ভাষার অমরগ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ লিখে গেছেন। রাষ্ট্রশাসন ও কূটনৈতিক কৌশলের ক্ষেত্রে এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা শাস্ত্র মানা হয়। যেহেতু তিনি ‘কুটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভূত ছিলেন তাই সেটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে তার সবচেয়ে পরিচিত ও প্রিয় নাম ‘চাণক্য’ এর উদ্ভব ‘চানকা’ থেকে। চানকা হচ্ছে তার গ্রামের নাম। এই গ্রামেই তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মতান্তরে তার পিতার নাম ‘চানক’ থেকে ‘চাণক্য পণ্ডিত’ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত হয়ে ওঠেন চাণক্য। তাকে বিষ্ণুগুপ্ত নামেও ডাকা হয়।
চূড়ান্ত পাণ্ডিত্য
চাণক্য কী পরিমাণ জ্ঞানী ও পণ্ডিত ছিলেন তার শাস্ত্র পড়লেই সে সম্পর্কে একটি ধারণা করা যায়। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, লেখক, দার্শনিক, শাসক এবং কূটনীতিবিদ ছিলেন। তার সমাজ ও জীবন সম্পর্কিত বক্তব্যগুলো আজকের আধুনিক জীবনেও সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্তা। তার ‘অর্থশাস্ত্র’ (Arthashastra) গ্রন্থে তিনি চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন একটি রাষ্ট্র কীভাবে গড়ে ওঠে এবং পরিণতি লাভ করে। তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন কীভাবে একজন শাসককে নিজস্ব ভূখণ্ডের সীমানা পেরিয়ে আরও ভূখণ্ড ও মূল্যবান সম্পদ নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে হয়। একইভাবে সম্পদ ও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে তার প্রজাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও জীবনমান উন্নত করার জন্য কী কী কাজ করা যেতে পারে, সেসব বিষয়ও পুঙ্খানুপুঙ্খ লিপিবদ্ধ করেন চাণক্য।
আরও পড়ুন : শীতকাল যে কারণে বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
তার অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি নামে অর্থশাস্ত্র হলেও এটি মূলত শাসকের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রশাসন ও কূটনীতিবিষয়ক কৌশলের পরামর্শ। আর তৎকালীন সময়ের রাজা-মহারাজারা তাদের রাজদরবারে এরকম একজন দুজন পণ্ডিতকে সব সময়ই প্রাধান্য দিতেন। কাজেই জ্ঞানের ক্ষেত্রে এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে এসব পণ্ডিতের দারুণ ভূমিকা ছিল। সেই অর্থে বলা যেতেই পারে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পরবর্তীকালের রাজাদের রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনকল্যাণমূলক রাজ্য গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দিতে সমর্থ হয়েছিল। এর প্রমাণ পরবর্তী সময়ের প্রজাবৎসল শাসকদের রাজ্যশাসন ও রাজ্য পরিচালনা নীতি। স্পষ্টতই তাদের সেই সময়ের শাসনে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বড় একটি ছাপ পড়েছে। চাণক্য-সহায়তায় মৌর্যশাসন প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ২৪ বছর শাসনকাল যেমন বর্ণিল ছিল, তেমনি দ্বিতীয় প্রজন্ম বিন্দুসারার সমৃদ্ধিময় জনপ্রিয়তার পেছনেও ছিল চাণক্যের অবদান।
আমাদের জীবনের চাণক্যের মতে অবদানের কিছু মানুষ কে আজও সাফল্য দিতেই হবে। চাণক্য হয়তো আজ এই পৃথিবীতে নেই তবে চাণক্য ব্যবহারের এমনও মানুষ আজও পরিচালিত করছে প্রতিটি সংসার। প্রতিটি মানুষ বড় হওয়ার পিছনে বা সাফল্যের পিছনে, চাণক্যের মত পন্ডিত টা আজও আছে সেটা হচ্ছে কারো বাবা হতে পারে ,কারোর মা হতে পারে, আবার শিক্ষাগুরু হতে পারে কারো বন্ধু হতে পারে। চাণক্য বেঁচে রয়েছে প্রতিটি সংসারের এমনই রূপে।