জাতীয়

স্বাতী মোহন: মঙ্গলে নাসার সাফল্যের অন্যতম কারিগর যে ভারতীয়

স্বাতী মোহন: মঙ্গলে নাসার সাফল্যের অন্যতম কারিগর যে ভারতীয় - West Bengal News 24

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোযান পারসিভিয়ারেন্স রোভার বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সৌরজগতের ‘লাল গ্রহ’ বলে পরিচিত মঙ্গলের মাটি ছুঁয়েছে। সফল ভাবে অবতরণ করেছে পারসিভিয়ারেন্স রোভার।

সৌরজগতের কোনও গ্রহ বা উপগ্রহে পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত যত নভোযান পাঠানো হয়েছে, সে সব মিশন বা প্রকল্পে সবচেয়ে দুরূহ কাজ হিসেবে ধরা হয়েছে ওই গ্রহ বা উপগ্রহের পৃষ্ঠে নভোযানের সফল অবতরণকে। সেই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই উৎরেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোযান পারসিভিয়ারেন্স রোভার।

আর নাসার এ মিশনে সেই কাজ সফল ভাবে করার পেছনে যে মহাকাশ বিজ্ঞানীর ভূমিকা রয়েছে, তিনি হলেন ড. স্বাতী মোহন। জন্মসূত্রে ভারতীয় স্বাতী মোহনের হাতেই ছিল পারসিভিয়ারেন্স রোভার অবতরণের মূল দায়িত্ব।

মঙ্গলে পাঠানো রোভারের গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশন্স অর্থাৎ জিএনঅ্যান্ডসির প্রধানের দায়িত্বে আছেন ড. স্বাতী মোহন। তিনি ও তার টিম মিলে এই অপারেশনকে সফল করলেন।

লাল গ্রহের রুক্ষ মাটিতে পারসিভিয়ারেন্স রোভার নামার পর নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি স্বাতী। তাৎক্ষণিক এক টুইটবার্তায় তিনি জানান, “পারসিভিয়ারেন্স সফল ভাবে মঙ্গলের মাটিতে নেমেছে। এখন এটি প্রাণের সন্ধান করতে প্রস্তুত।”

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই স্বাতী মোহন তার পুরো টিমের সঙ্গে নাসার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে উৎকণ্ঠার সঙ্গে পারসিভিয়ারেন্স রোভারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। রোভারের সফ অবতরণে একদিকে যেমন নাসার সমস্ত বিজ্ঞানীরা হাঁফ ছাড়েন, সেই সঙ্গে স্বাতী মোহনের কল্যাণে এই ঐতিহাসিক সাফল্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হল ভারতের নামও।

পারসিভিয়ারেন্স রোভারের জিএনঅ্যান্ডসি প্রধান স্বাতীর জন্ম ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। জন্মের এক বছর পরেই ১৯৮৬ সালে মা, বাবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন স্বাতী। তারপর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনার পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রে। বড় হয়েছেন উত্তর ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে।

ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল বাবার মতো চিকিৎসক হবেন; পাশাপাশি ৯ বছর থেকে ধীরে ধীরে মহাকাশের প্রতিও আকর্ষণ জন্মাচ্ছিল স্বাতীর। ১৬ বছর বয়সে মার্কিন টিভি সিরিজ ‘স্টার ট্র্যাক’ দেখার পর পাকাপাকিভাবে সিদ্ধান্ত নেন- মহাকাশ বিজ্ঞানী হবেন তিনি। তখন থেকেই ব্রহ্মাণ্ড তাকে ভীষণ ভাবে টানতে শুরু করে।

এই স্বপ্ন পূরণে মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএস) করেন স্বাতী; অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্সে মাস্টার্স অব সায়েন্স (এমএস) করেন ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। তারপর সেখান থেকে পিএইচডিও সম্পন্ন করেন।

পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজার ডিজিটালকে স্বাতী মোহন জানান, মঙ্গলের যে এলাকায় নেমেছে পারসিভিয়ারেন্স রোভার, সেই জায়গাটির নাম ‘জেজোরো ক্রেটার’ বা দৈত্যাকৃতির হ্রদ। কোটি কোটি বছর আগে কোনও সুবিশাল আগ্নেয়গিরির শীতল হয়ে ওই হ্রদটি তৈরি হয়েছিল।

২৮ মাইল জুড়ে বিস্তৃত জেজেরো ক্রেটারের গোটা এলাকাটি ভর্তি খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ে। সমতল সেখানে খুবই কম। ৩০০-৪০০ মিটার অন্তর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সেখানে। তাই নামার আগে থেকে খুব নিখুঁত ভাবে জায়গাটি চিনতে, বুঝতে না পারলে যে কোনও মুহূর্তে সুউচ্চ পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল পারসিভিয়ারেন্স রোভারের। এমনকি তা পাহাড়ের খাঁজে আটকেও অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।

বৃহস্পতিবার সেই কাজকেই সফল করে দেখালেন ভারতীয়-মার্কিন নারী স্বাতী মোহন ও তার দলের সদস্যরা। এর আগে শনিতে পাঠানো নাসার মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি’ ও চাঁদে পাঠানো নভোযান ‘গ্রেল’ অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন স্বাতী।

সপরিবারে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও জন্মভূমী ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে স্বাতী মোহনের। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘৩ থেকে ৫ বছর অন্তর ভারতে যাই। বেঙ্গালুরুতে এখনও বাড়ি আছে আমাদের। মা, বাবা প্রতি বছরই সেখানে গিয়ে কয়েকটা মাস কাটিয়ে আসেন। আমার মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও শিশু চিকিৎসক স্বামী সন্তোষেরও বাড়িও বেঙ্গালুরুতে।’

সূত্র: আনন্দবাজার, মিন্ট

আরও পড়ুন ::

Back to top button