আন্তর্জাতিক

টিকার দুই ডোজের মধ্যে লম্বা বিরতি ঝুঁকিপূর্ণ

টিকার দুই ডোজের মধ্যে লম্বা বিরতি ঝুঁকিপূর্ণ - West Bengal News 24

শুক্রবার সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডা. ফাউসি বলেন, সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে সার্স-কোভ-২ বা মূল করোনাভাইরাস ছাড়াও এর কয়েকটি অভিযোজিত ধরন বা ভ্যারিয়েন্টের অত্যন্ত সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অভিযোজিত ধরনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী।

বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, যদি কোনো ব্যক্তি করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে দীর্ঘ বিরতি দেন, সেক্ষেত্রে তিনি করোনার যেকোনো অভিযোজিত ধরনে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকেন।

এনডিটিভি অনলাইনকে ফাউসি বলেন, ‘করোনা টিকা ফাইজারের প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার সঠিক বা আদর্শ বিরতি হলো ৩ সপ্তাহ। মডার্নার ক্ষেত্রে এটি ৪ সপ্তাহ। আপনি যদি টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এর চেয়ে বেশি বিরতি নেন, সেক্ষেত্রে করোনার যেকোনো অভিযোজিত ধরনে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়বে।’

টিকার দুই ডোজের মধ্যে লম্বা বিরতি ঝুঁকিপূর্ণ - West Bengal News 24

‘যুক্তরাজ্যে এমনটা দেখা গেছে। প্রচুর মানুষ সেখানে করোনার অভিযোজিত ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এটি ঘটেছে টিকার দুই ডোজের মধ্যকার দীর্ঘ বিরতির কারণে। এ কারণে আমরা সবাইকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেব।’

‘টিকার ডোজের ঘাটতি দেখা দিলে অবশ্য এই বিরতি বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

তৃতীবারের মতো গত মাসে করোনা টিকার দুই ডোজের মধ্যকার বিরতি বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন বা যে কোনো দুই ডোজের করোনা টিকার প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার বিরতিকাল হবে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ। এর আগে গত মার্চে এই বিরতি ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ করা হয়েছিল। তারও আগে, দুই ডোজের মধ্যকার বিরতি ছিল ২৮ দিন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদিও বলছে, দুই ডোজের মধ্যকার দীর্ঘ বিরতিতে মানবদেহে অ্যান্টিবডি বাড়ে বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত ভারতে টিকার ডোজের তীব্র ঘাটতি দেখা দেওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

এদিকে ভারতে ‘ডেল্টা’ নামে করোনার যে অভিযোজিত ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট দেখা গেছে, তা মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। এমনকি গত কয়েক মাসে করোনাভাইরাসের যে ধরনগুলো শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ডেল্টা।

এনডিটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফাউসিও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই ধরনটি মূল ভাইরাসের তুলনায় অনেক দ্রুত ও নিখুঁতভাবে মানবদেহে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং তা প্রমাণিত। কোনো দেশে যদি ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয় তাহলে এখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে সেখানে খুব দ্রুত উচ্চহারে করোনা সংক্রমণ দেখা দেবে। বিশেষ করে ওই দেশের বেশিরভাগ নাগরিক যদি টিকা না নিয়ে থাকেন।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে পরিত্রাণ পেতে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোকে গণটিকাদান কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে ফাউসি বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব অধিকসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা উচিত। যদিও গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টার সংক্রমণ ক্ষমতা এতই বেশি যে টিকার দুই ডোজ নেওয়ার পরও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও আমি বলব, মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র এটি। বিশ্বের যত বেশিসংখ্যক মানুষকে আমরা টিকার আওতায় আনতে পারব, তত দ্রুত এই মহামারি থেকে মুক্তি মিলবে।’

সূত্র: এনডিটিভি অনলাইন

আরও পড়ুন ::

Back to top button