বিয়ের এক বছর না যেতেই শাহরুখের নায়িকার রহস্যময় মৃত্যু, যা ঘটেছিল সেদিন
২৮ বছর পরও শাহরুখ খানের সহশীল্পী বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর কারণ অজানা। হত্যা, আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা- কিছুই জানা যায়নি এখনো। ‘দিওয়ানা’-তে শাহরুখ খানের বিপরীতে কাজ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। এরপরই তার অকস্মাৎ মৃত্যুতে বদলে যায় সব।
১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে পাঁচ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় দিব্যার। যখন সবাই টের পান, দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি ১৯ বছরের অভিনেত্রীকে।
‘শোলা অউর শবনম’-এ অভিনয়ের সময় গোবিন্দর সঙ্গে আলাপ। জানা যায়, তাদের মধ্যেও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এরপর গোবিন্দর মাধ্যমে পরিচয় প্রযোজক সাজিদ নাদিওয়াদওয়ালার সঙ্গে। তার পর বন্ধুত্ব, প্রেম। ১৯৯২ সালের ১০ মে বিয়ে। তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ। নতুন নাম সানা নাদিওয়াদওয়ালা। অভিনয়ে যাতে প্রভাব না পড়ে, বিয়ের কথা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
দিব্যার রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে বই লিখেছিলেন ট্রয় রিবেইরো। ঘটনাস্থলে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। রিবেইরো নিজেও এক জন সাক্ষী। ট্রয়ের বই অনুযায়ী, দিব্যা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বহু দিন ধরে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে মদ্যপান করেছিলেন। বাড়িতে একাধিক অতিথি এসেছিলেন। দিব্যা নিজের গ্লাস ভর্তি করে বারান্দায় একা সময় কাটাচ্ছিলেন। পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে সবাই ছুটে যান। ট্রয় জানিয়েছেন, অতিথিরাই হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ট্রয়ের লেখা থেকে জানা যায়, দিব্যার বাবা ও ভাইকে সামলানো যাচ্ছিল না। বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলল। ভোর বেলা দিব্যার মা হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি বিশ্বাসই করছিলেন না। তবে হাসপাতালেই দিব্যার বাবা ও ভাই মাকে দোষারোপ করছিলেন। যার কারণ আজো অজানা।
সাজিদ হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন মৃত্যুর ঘণ্টা খানেক পরে। দিব্যার মৃতদেহ দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ট্রয়। তাকে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। ফের তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন চিকিৎসকরা।
দিব্যার এক অতিথি পুলিশকে জানান, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ঘটেছে। তাই তিনি স্পষ্ট করে জানেন না যে দিব্যা আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন।
দিব্যার বন্ধু পুলিশকে জানান, মৃত্যুর সময়ে নীতা তার সঙ্গেই ছিলেন। দিব্যা বারান্দার রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। নীতা বাঁচানোর জন্য এগোতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে দিব্যার ঝাঁপ। সে দিন সন্ধেবেলা সাজিদের সঙ্গে বিবাদ হয়। সাজিদ বা়ড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দিব্যা হুমকি দিয়েছিলেন, তুমি যদি ১০ মিনিটে ঘরে না ঢোকো, আমাকে আর দেখতে পাবে না। দিব্যার বন্ধু জানায়, সাজিদ হুমকিকে পাত্তা দেননি।
বোঝা যায়, ট্রয় তার সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে চাননি গৃহপরিচারিকাকেও। তার বক্তব্য, মৃত্যুর আগে পরিচারিকাই শেষ বার দেখেছিলেন দিব্যাকে। কিন্তু ট্রয়ের আক্ষেপ, পুলিশ এক বারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে দিব্যার জন্ম। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা। তারপর অভিনয়ে। তেলুগু ছবিতে দাগ্গুবাতি ভেঙ্কটেশের বিপরীতে শুরু। প্রথম হিন্দি ছবি ‘বিশ্বাত্মা’। ‘শোলা অউর শবনম’ ও ‘দিওয়ানা’ সাফল্যের তাকে চূড়ায় পৌঁছে দেয়।
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন