কলকাতা

অভিযুক্তকে জেরার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু উল্টোডাঙা থানার সাব ইনস্পেক্টরের

সুজয় পাল

অভিযুক্তকে জেরার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু উল্টোডাঙা থানার সাব ইনস্পেক্টরের - West Bengal News 24

কী পাঁচ বছর বয়স? বাচ্চা মেয়েটির পরিবারের তরফে গত শুক্রবার যখন উল্টোডাঙা থানায় অপহরণের মামলা দায়ের হয়, সাব-ইন্সপেক্টর চমকে উঠেছিলেন। আসলে তাঁর চোখে ভাসছিল নিজের কন্যার মুখ। ওই বয়সীই তো হবে তাঁর মেয়ে। সহকর্মীরা বলেন, কড়া পুলিশ অফিসার হলেও ভীষণ নরম মনের মানুষ সাব-ইন্সপেক্টর আফতাব আহমেদ।

তাই ছোট্ট মেয়েটির অপহরণের কেসকে তিনি ব্য়ক্তিগত ভাবেই নিয়েছিলেন। হন্যে হয়ে খুঁজেছেন অভিযুক্তকে। কয়েক দিনের রাতভর পরিশ্রম সার্থক হল মঙ্গলবার। অভিযুক্ত দোষ কুবুল করলেও মেয়েটিকে তখনও পাওয়া যায়নি। একদিকে অভিযুক্তকে ধরে ফেলার আনন্দ অন্যদিকে, নিজের মেয়ে বয়সী ছোট্ট বাচ্চাটিকে খুঁজে না পাওয়া, দুটোই অফিসারকে ভিতরে ভিতরে অস্থির করে দিচ্ছিল।

জেরা করতে করতে উত্তেজনায় রীতিমতো ঘামতে থাকেন পুলিশ অফিসার। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পরপর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হল ৪১ বছর বয়সী উল্টোডাঙা থানার সাব-ইন্সপেক্টর আফতাব আহমেদের। ঘটনায় শোকস্তব্ধ পুলিশ মহল।

আরও পড়ুন : আজ মহাষ্টমী, করোনাবিধি মেনে মণ্ডপে মণ্ডপে অঞ্জলি, কুমারী পুজো

ঘটনাটা গত শুক্রবারের। উল্টোডাঙ্গা থানা এলাকার এক বছর তিনেকের শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়। থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করে শিশুটির পরিবার। এই কেস হাতে নেন সাব-ইন্সপেক্টর আফতাব আহমেদ। তার পর গত কয়েকদিন আগাগোড়া এই কেসটিকে নিয়ে ভেবেছেন তিনি। তাঁর সহকর্মীরা বলছেন, আফতাব সাহেবের নিজের মেয়ে রয়েছে প্রায় ওই বয়সী।

তাই এই কেস দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সর্বদা ওই অপহরণের কেসটা নিয়ে ভেবেছেন। তার মধ্যে বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু পাত্তা দেননি তিনি। লক্ষ্য একটাই, মেয়েটিকে খুঁজে বের করতেই হবে।

শেষ পর্যন্ত অপরাধীর নাগাল পান। তাকে গ্রেফতার করে উল্টোডাঙা থানায় আনা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ওই ব্যক্তি স্বীকারও করে নেয় যে সেই চুরি করেছিল বাচ্চাটিকে। আর তাকে রেখে এসেছিল উলুবেড়িয়ায় একটি বাড়িতে।

আরও পড়ুন : এক লাফে বেড়ে গেল সংক্রমিতের সংখ্যা, ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন আক্রান্ত ৭৬৮

কিন্তু এখন কোথায় সেই বাচ্চা? অভিযুক্তকে এই প্রশ্নের জেরা জেরা করতেই ঘামতে শুরু করেন অফিসার। ব্যাপারটা খেয়াল করেন ওসি। এরকম ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে কেন? আফতাব ধীরে ধীরে বলেন, অসুস্থ বোধ করছেন। এর পর ওসি নিজেই গাড়ি করে মঙ্গলবার রাতে বাইপাসের ধারে এক হাসপাতালে নিয়ে যান।

চিকিৎসকেরা সাব-ইন্সপেক্টর আফতাবকে পরীক্ষা করে জানান, অসুবিধা নেই। সমস্যা গুরুতর নয়। তবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়। এর পর রাতের দিকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন আফতাব আহমেদ। জানা গিয়েছে, রাতের দিকে একাধিক বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর পর ভোর ৪ টা ২০ তে থেমে যায় স্পন্দন। মৃত্যু হয় তাঁর। গোটা ঘটনায় শোকের ছায়া পুলিশ মহলে। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।

এদিকে যে বাচ্চা মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য শরীরের পরোয়া না করে দিনরাত এক করে ফেলেছিলেন সাব-ইন্সপেক্টর, সেই বাচ্চাটিকে উদ্ধার করাই হবে আফতাবের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন বলে জানান উল্টোডাঙা থানার অফিসাররা।

সুত্র : টিভি ৯

আরও পড়ুন ::

Back to top button