ঝাড়গ্রাম: কেন্দ্রের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেন। এ রাজ্যে সাঁওতালি সাহিত্যে তিনিই প্রথম পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। সাহিত্য জগতে তিনি ‘খেরওয়াল সরেন’ ছদ্মনামে সুপরিচিত। এর আগে দু’বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন খেরওয়ালবাবু। বছর চৌষট্টির খেরওয়াল সরেনের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে।
রবিবার কেন্দ্র সরকারের তরফে খেরওয়ালবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শাল, ফুলের তোড়া ও উপহার দিয়ে সংবর্ধনা দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ। ভারতী বলেন, “অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী খেরওয়ালবাবু নিজের সাহিত্যচর্চার জন্য ৩৩ বছরের চাকরি জীবনে প্রোমোশন নেননি। যোগ্য মানুষটি দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নারগিক সম্মানের জন্য বিবেচিত হয়েছেন। কেন্দ্রের তরফে তাঁকে সম্মান জানাতে এসেছি।”
২০০৭ সালে ‘চেৎরে চিকায়েনা’ নাটকের জন্য নয়াদিল্লির সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান খেরওয়ালবাবু। দিব্যেন্দু পালিতের উপন্যাস ‘অনুভব’ সাঁওতালিতে অনুবাদ করার জন্য ২০১৯ সালে সাঁওতালিতে সেরা অনুবাদ-কাজের জন্য দ্বিতীয়বার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি।
কালীপদ সরেনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৯ ডিসেম্বর লালগড়ের বেলাটিকরি অঞ্চলের রঘুনাথপুর গ্রামে। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর লেখালিখি শুরু। মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে লিখেছিলেন যাত্রাপালা ‘নিধানদশা’। পালার বিষয়বস্তু ছিল আদিবাসী সমাজের একাংশের মধ্যে শিক্ষা ও চেতনার অভাবে করুণ পরিণতি। কলেজ জীবনে ১৯৭৭ সাল থেকে চুটিয়ে লিখতে শুরু করেন গল্প, কবিতা, একাঙ্ক নাটক, প্রবন্ধ। ‘পছিম বাংলা’ সহ রাজ্যের বিভিন্ন সাঁওতালি পত্রিকায় তাঁর অজস্র লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৯২ সালে প্রথম গল্প সংকলন ‘খেরওয়ালকো দিশাকাতে’ প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় একশোটি কবিতার সংকলন ‘খেরওয়াল আড়াং’। ওই সময়েই প্রকাশিত হয় তাঁর রম্য রচনার বই ‘সারিস্যে নাস্যে বেঁগাড় রাস্যে’ (সত্যি না মিথ্যে বেগুনের ঝোল)। তাঁর লেখা একশোটি সাঁওতালি গানের লিরিক্স নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘সেরেঞ আখড়ারে খেরওয়াল’। এ পর্যন্ত গল্প-কবিতা-নাটক-যাত্রা মিলিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩টি। নিজে গান লিখে সুর দেন।
নিজের গাওয়া চল্লিশটি গানের চারটি অডিয়ো সিডিও প্রকাশিত হয়েছে। খেরওয়ালের একটি আদিবাসী যাত্রাদলও আছে। প্রথম দিকে বাংলা হরফে সাঁওতালি লিখলেও পরে অলচিকি লিপিতে সাহিত্য রচনা করে চলেছেন। ২০১৫ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে একটি সাঁওতালি সিনেমাতে অভিনয়ও করেছেন। খেরওয়ালবাবুর কথায়, “এই সম্মান আমার একার নয়।
জঙ্গলমহলের অগণিত পাঠকের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”