জানা-অজানা

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

দেশব্যাপী ব্যাপক অস্থিরতার মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।

বুধবার (১৩ জুলাই) রাজাপাকসে, তার স্ত্রী এবং তাদের দুই দেহরক্ষী মালদ্বীপের রাজধানী মালে অবতরণ করেন। শ্রীলঙ্কা যখন নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভে উত্তাল, তখন পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষিত সময় শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হন গোতাবায়া।

সিএনএন জানায়, সোমবার অন্তত দুবার রাজাপাকসাদের দেশত্যাগ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। একপর্যায়ে বুধবার শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনী তাদের উড়ে যাওয়ার জন্য একটি এএন৩২ সামরিক বিমান সরবরাহ করে।

গণবিক্ষোভের মুখে এই প্রথম কোনো নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, বিষয়টি এমন নয়। আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি থেকে ফিলিপাইনের ফার্দিনান্দ মার্কোসের মতো কয়েকজন নেতাকে এভাবে পালাতে দেখেছে বিশ্ববাসী।

নিচে এমন কিছু নেতার তালিকা তুলে ধরা হলো।

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

আশরাফ ঘানি
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি তার পরিবারের সঙ্গে কাবুল থেকে উজবেকিস্তানে উড়ে যান। তিনি যাওয়ার সময় চারটি গাড়ি ও একটি হেলিকপ্টার ভর্তি নগদ অর্থ নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চলে যাওয়ার পরপরই ঘানি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, তিনি ‘রক্তপাত এড়াতে’ আফগানিস্তান ছেড়েছেন।

তবে অনেকের বিশ্বাস, আশরাফ ঘানি পালিয়ে যাওয়ায় তালেবানরা সহজেই রাজধানী দখল করে নিয়েছে। ঘানি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে নিবৃত্ত না হলেও স্থবির হয়ে যেতে পারত।

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ
ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০১৪ সালে ইউরোপপন্থী বিক্ষোভকারীদের মাসব্যাপী বিক্ষোভের পর দেশটির রাজধানী কিয়েভ থেকে পালিয়ে যান।

তার পলায়ন ছিল আশ্চর্যজনক ঘটনা। কারণ ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন, যার মাধ্যমে অস্থিরতার অবসান ঘটতে পারত।

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

ইদি আমিন
ইদি আমিন ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার শাসনকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিল দেশটির জনগণ। কিন্তু দ্রুতই তিনি দুর্নীতি ও বর্বরতায় জড়াতে শুরু করেন। বিরোধিতাকারীদের নির্মমভাবে হত্যা করার জন্য তাকে ‘উগান্ডার কসাই’ বলা হয়।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিন উগান্ডায় তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

এসব কারণে আমিনের বিরুদ্ধে উগান্ডার জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় যখন তিনি ১৯৭৮ সালে সৈন্যদের তানজানিয়া আক্রমণের নির্দেশ দেন। কারণ ওই আক্রমণ ব্যর্থ হয় এবং তিনি লিবিয়া পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

১৯৮০ সালে তিনি সৌদি আরবে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

ফার্দিনান্দ মার্কোস
১৯৬৫ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন মার্কোস। তিনি ১৯৬৫ সালে গণতান্ত্রিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং ১৯৭২ সালে তিনি দেশে সামরিক আইন জারি করেন; যা তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে।

১৯৮১ সালে তিনি সামরিক আইনের অবসান ঘটান কিন্তু একই বছর তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে তার বিরুদ্ধে বিরোধীনেতা বেনিগনো অ্যাকুইনোকে হত্যার অভিযোগ উঠলে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে তিনি অ্যাকুইনোর স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে জয়ী হন। তবে নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি করার অভিযোগ উঠেছিল।

অবশেষে, একই বছর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে হাওয়াইতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে ওই বছরেই তার মৃত্যু হয়।

তার ছেলে ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সম্প্রতি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন যেসব প্রভাবশালী শাসক

মোহাম্মদ রাজা পাহলভী
পাহলভি ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইরানের শাসক ছিলেন। তিনি পশ্চিমপন্থী হিসেবে দেশের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়েছিলেন। কিন্তু শিয়াদের কাছে তিনি সমালোচিত হন।

১৯৭৯ সালে, আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ইরানী বিপ্লবের সূচনা করেন। এই বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে পাহলভি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি প্রথমে মিসরে এবং পরে মরক্কোতে চলে যান। তারপর তিনি বাহামা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে যান। একপর্যায়ে তিনি আবার মিসরে ফেরেন এবং ৬০ বছর বয়সে সেখানে মারা যান।

এই তালিকায় আরও রয়েছেন কিউবার ফুলজেনসিও বাতিস্তা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মোবুতু সেসে সেকো ও তিউনিসিয়ার জাইন আল-আবিদিন বেন আলী।

সূত্র : ফার্স্ট পোস্ট, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

আরও পড়ুন ::

Back to top button