বর্ধমান

সিবিআইয়ের চিঠি পাবার সাথে সাথেই পূর্ব বর্ধমান ডিপিএসসিতে শুরু তত্‍পরতা

সিবিআইয়ের চিঠি পাবার সাথে সাথেই পূর্ব বর্ধমান ডিপিএসসিতে শুরু তত্‍পরতা

শিক্ষক-নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে সিবিআই ও ইডি ইতিমধ্যেই একাধিক রাঘববোয়ালকে জালে পুরেছে। তবুও সিবিআই মনে করছে, ২০১৪ সালের প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চাকরি দেওয়া নিয়ে বড় রকমের অনিয়ম রয়েছে।

তাই সিবিআই চাইছে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির একেবারে শিকড়ে পৌছতে। সেইজন্য সিবিআই ২০১৪ সালে টেট উত্তীর্ণদের তালিকা ও সেখান থেকে যাঁরা নিয়োগ হয়েছেন, তাঁদের সবিস্তারে তথ্য হাতে পেতে চাইছে। এর জন্য সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার ডিএসপি সঞ্জয় কুমার বনসল রাজ্যের প্রতিটি জেলার প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদকে (ডিপিএসসি) চিঠি দিয়েছেন। চিঠি পেয়েই নড়ে চড়ে বসেছে প্রাথমিক শিক্ষা দফতর। সিবিআইকে তথ্য দেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপ-সচিব পার্থ কর্মকার সব জেলার ডিপিএসসির চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন।

সিবিআই এর চিঠি পাবার পরেই পূর্ব বর্ধমানের ডিপিএসসিতে তত্‍পরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের ডিপিএসসির চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টচার্য বলেন, “সিবিআই যে সব তথ্য চেয়েছে, তা যোগাড় করার কাজ চলছে।” জেলা ডিপিএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৫ মে কলকাতার নিজাম প্যালেসের ১৪ তলায় সব তথ্য জমা দিতে হবে বলে সিবিআই চিঠিতে জানিয়েছে।

এই অবস্থার মধ্যে তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে এখন হিমশিম অবস্থা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমান ডিপিএসসির আধিকারিকদের।কারণ ২০১৪ সালে অবিভক্ত বর্ধমানের তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে ডিপিএসসিকে। এখনও অবধি খবর, ২০১৪ সালে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় টেট উত্তীর্ণ হয়েছিল ১২ হাজারের মতো পরীক্ষার্থী। তারমধ্যে সাড়ে সাত হাজার পূর্ব বর্ধমানের।

সিবিআই তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি দিতে হবে। এ ছাড়াও সিবিআই কে দিতে হবে উত্তীর্ণ হওয়া সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য।যেমন নিয়োগ-সংক্রান্ত তালিকায় কত নম্বরে নাম ছিল, জন্মের শংসাপত্র, পিতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, কোন স্কুলে যোগ দিয়েছিল তার ঠিকানা, বর্তমানে শিক্ষকের অবস্থান ও তাঁর ফোন নম্বর।

ডিপিএসসির এক কর্তার কথায়,”অনেক শিক্ষক উত্‍সশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে অনেকে বদলি হয়ে গিয়েছেন।একটা বড় অংশের শিক্ষক পশ্চিম বর্ধমানে রয়েছেন। ওইসব শিক্ষকদের তথ্য যোগাড় করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে আধিকারিকদের। ডিপিএসসি সূত্রে এও জানা যায়, এর আগে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের নিয়োগ হওয়া ১২৭২ জনের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় (টেট) উত্তীর্ণদের চাকরি দেওয়া নিয়ে ২০১৪ সাল থেকেই বিতর্ক রয়েছে। সেই সময়ে পূর্ব বর্ধমানের কালনার এক তৃণমূল নেতার আত্মীদের প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছিলেন।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জেলার জামালপুরে অনুষ্ঠিত বিজেপির সভায় যোগ দিয়ে অভিযোগ করেন,”এই জেলার এক প্রবীণ নেতা ‘জোড়া চাকরি’ নিয়েছেন ও বাকি চাকরি দোকান খুলে বিক্রি করেছেন”।

সিবিআইয়ের তথ্য চাওয়ার বিষয়টিকে ‘হাতিয়ার’ করে সরব হয়েছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি এবিপিটিএ-র জেলার সম্পাদক নীরব খাঁ বলেন, “শিক্ষক নিয়োগে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে তা সিবিআইয়ের পদক্ষেপই বলে দিচ্ছে। শুধু ২০১৪ নয়,২০১২ ও ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।তাই আমরা চাই এই সমস্ত নিয়োগ নিয়ে তদন্ত করে দুর্নীতির পর্দাফাঁস করুক সিবিআই।”অপর দিকে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি আবু বক্কর খুব সতর্ত ভাবে বলেন,”আমরা সিবিআইয়ের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করি”। একই সুরে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অশোক রুদ্রর। তিনি বলেছেন, ”সিবিআইয়ের থেকে আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করব”।

আরও পড়ুন ::

Back to top button