ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা

স্বপ্নীল মজুমদার

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা
বৃষ্টির পরে বিকেলে বেলপাহারি তে নবজোয়ার কর্মসূচিতে

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে এসে নবজোয়ার কর্মসূচি করে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কুর্মি আন্দোলনের কারণে ঝাড়গ্রামের গাডরোয় শুক্রবার অভিষেকের জনসভা বাতিল করা হয়। এদিন প্রবল বৃষ্টির পরে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ বেলপাহাড়িতে এসে পৌঁছন অভিষেক।

গাড়ির দরজা খুলে পাদানিতে পা রেখে শরীর কিছুটা বের করে হাত নেড়ে জনসংযোগ করেন কয়েক কিলোমিটার রাস্তা। তারপর নারায়ণপুরে কুর্মিদের জমায়েত থাকলেও সেখানে অবশ্য দাঁড়ায়নি সাংসদ। জামবনির পড়িহাটি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানেও তিনি জনসংযোগ ও রোড-শো করেন এবং স্থানীয় সংখ্যালঘু মানুষদের সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর সন্ধ্যায় দহিজুড়ি বাজার এলাকায় রোড শো করেন। গোলাপের পাপড়ি ছুঁড়ে দেন সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে। ঝাড়গ্রাম যাওয়ার সময় শিরশি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সমস্যার কথা শোনেন। সেখানকার বাসিন্দারা একটি বাঁধ সংস্কার ও পানীয় জলের সমস্যা সুরাহার দাবি জানান অভিষেকের কাছে। এরপর ঝাড়গ্রাম শহরেও রোড শো করেন অভিষেক। ঝাড়গ্রাম শহরের মানুষজন তাকে স্বাগত জানান, দলীয় কর্মীরাও তাকে স্বাগত জানান ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে। এদিন অভিষেকের যাত্রাপথে তৃণমূল কর্মীরা বারবার স্লোগান দিচ্ছিলেন ”আমাদের এনার্জি অভিষেক ব্যানার্জি।”

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা
রাতে অধিবেশন স্থলের তাঁবুতে অভিষেক

নির্বিবাদে এই কর্মসূচি হলেও অভিষেক লোধাশুলি হয়ে গজাশিমূলে যাওয়ার পথে গড় শালবনি এলাকায় রাত পৌনে আটটা নাগাদ তাঁর কনভয় আক্রান্ত হয়। কনভয়ের মধ্যেই ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও। অভিযোগ গড়শালবনি এলাকায় বিকেল থেকেই জমায়েত করে রেখেছিলেন কুর্মি সমাজের লোকজন। সেই জামায়েতে অভিষেককে উদ্দেশ্য করে ‘চোর’ স্লোগান দেওয়া হয় এবং অভিষেক দুর হাটো স্লোগানও দেওয়া হয়।

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা
অভিষেক ব্যানার্জীর কনভয় তে থাকা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভাঙচুর ঝাড়গ্রাম জেলার গড় শালবনি এলাকার ঘটনা

শীর্ষ পুলিশ কর্তারা ব্যারিকেড করে কোনভাবে অভিষেকের কনভয় পার করে দিলেও আক্রান্ত হয় মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি। ইট ছোড়া হয় মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে। জানলার কাঁচ ভেঙে জখম হন মন্ত্রীর গাড়ির চালক, মন্ত্রীও জখম হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এছাড়াও ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু ও বিনপুরের বিধায়ক দেবনাথ হাঁসদা সহ বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীর গাড়িতেও ইট পক্কেল পড়ে। তৃণমূল কর্মীদের বাইক থেকে নামিয়েও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রশমিত হয়।

অভিষেক অবশ্য লক্ষ্মীসাগর থেকে লোধাশুলি কিছুটা পথ হাঁটেন। তারপর তিনি গজাশিমূল মাঠে তার অধিবেশন স্থলের তাঁবুতে পৌঁছোন। বেশি রাতে সেখানে তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে দলের নেতা কর্মীদের উদ্দশ্যে অভিষেক বলেন, কোনো প্রলোচনায় পা দেবেন না এবং তিনি স্পষ্ট করে দেন কুর্মি সংগঠন গুলিকে হুশিয়ারি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানতে হবে এই ঘটনায় কুর্মি সংগঠন জড়িত কিনা। অভিষেক আরো বলেন আমি বিশ্বাস করি কুর্মিরা এই ঘটনা ঘটায়নি কারণ কুরমি সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে তাঁরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়েছিলেন। অভিষেক বলেন যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বা কোন নেতা এর পেছনে যুক্ত আছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা
সন্ধায় দহিজুরি তে মানুষদের ভিড়ের মাঝে রোড শো করার সময় অভিষেক মানুষের উদেশ্যে ছুড়ে দিলেন গোলাপের পাপড়ি

নাম না করে অভিষেক শুভেন্দু অধিকারীকেই কটাক্ষ করেন রাতে। অধিবেশন শেষ হওয়ার পর কথা ছিল শনিবার সকালে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন অভিষেক। কিন্তু তা আর তিনি করেন নি। বৈঠক বাতিল করেই চলে যান পশ্চিম মেদিনীপুরে। এদিকে মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা ঘটনার জন্য ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ সুয়োমোটো কেস দায়ের করেছে ১৫ জনের নামে। তবে তাতে গ্রেফতার করা হয়েছে আদিবাসী নেগাচারী কুর্মি সমাজের রাজ্য সভাপতি অনুপ মাহাতো সহ চারজনকে। তবে অনুপের অভিযোগ তাকে মানিকপাড়ার বাড়ি থেকে পুলিশ জোর করে তুলে নিয়ে এসেছে। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে কোনো ভাবেই যুক্ত নন।

ঝাড়গ্রামে অভিষেকের নবজোয়ার, মন্ত্রী বিরবাহার গাড়িতে হামলা, কুড়মি নেতা সহ ধৃত চার, উত্তেজনা
আদিবাসী নেগাচারি কুরমি সমাজের নেতা অনুপ মাহাতো সহ ধৃত চারজন

বাকি যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন তাঁরাও বলছেন, আমরা ওই ঘটনার কথা কোনো বিন্দু মাত্রও জানি না। বাকি ধৃত তিন জনের মধ্যে দুজন গাড়ির চালক, ও অন্য আরেকজনের একটি ছোট চা দোকান আছে এলাকায়। সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। ধৃতদের শনিবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক শুক্তি সরকার পুলিশের আবেদন ক্রমে অভিযুক্তদের তিনদিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এদিনই কুর্মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির সভাপতি তথা ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রাজেশ মাহাতো সহ অন্যান্য কুর্মি সামাজিক নেতারা ঝাড়গ্রামের একটি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, শুক্রবার রাতের ঘটনায় তারা কোনো ভাবেই যুক্ত নন। তারা ঘটনার নিন্দা ও করেছেন। তারা দায় চাপিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের ওপর। মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজেশ সহ অন্যান্য কুড়মি নেতাদেরও নাম রয়েছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button