ঝাড়গ্রাম

ঝাড়গ্রামে করোনা নিয়ে ভাঙল ক্ষোভের বাঁধ

ঝাড়গ্রামে করোনা নিয়ে ভাঙল ক্ষোভের বাঁধ

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে করোনা আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল ঝাড়গ্রাম শহরে। করোনায় মৃতের পরিজনের হাতে মার খেলেন এক চিকিৎসক। মেন রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন মৃতের আত্মীয়স্বজন ও বাসিন্দারা।

চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে জেলা সুপার স্পেশালিটির সুপার সহ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মবিরতি শুরু করেন। নজিরবিহীন ভাবে জেলাশাসক ও সিএমওএইচ-এর বিরুদ্ধে ‘হায়-হায়’ শ্লোগান দিতে থাকেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। জেলায় করোনা হাসপাতালে কোনও পরিকাঠামোই নেই বলে বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিল একাধিক চিকিৎসক সংগঠন।

শুক্রবার রাতে ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দু’জনের মৃত্যু হয়। রাতে মারা যান শহরের বাছুরডোবার হরিতকীতলার বৃদ্ধ ভবেশকুমার গিরি (৮৪) ও শহরের উত্তর বামদার যুবক সত্যনারায়ণ দাস (২৮)। ভবেশবাবুর দুই ছেলে দূর থেকে মৃত বাবাকে শেষ দেখা দেখতে চেয়েছিলেন। অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এদিকে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রাতেই করোনা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান সত্যনারায়ণের বাড়ির লোকজন। করোনা হাসপাতালের চতুর্থশ্রেণির কর্মী সম্বিত ঘোষকে রাতে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কোনও মতে পালিয়ে বাঁচেন তিনি। শনিবার সকালে সত্যনারায়ণের করোনার রিপোর্ট দেখানো ও মৃতদেহ দেওয়ার দাবিতে হাসপাতালের গেটের বাইরে জমায়েত করেন পরিজন ও পাড়ার লোকজন।

আরও পড়ুন : আফগানিস্তানে বিমান হামলায় ৪০ তালেবান নিহত

বেলা ১২ টা নাগাদ বাম নেতা-কর্মীরা করোনা হাসপাতাল কাছে মেন রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে সহ বাম নেতা কর্মীরা। তৃণমূল ও বিজেপির কয়েকজন কর্মীও অবরোধে ছিলেন। এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) অনিন্দ্যসুন্দর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়।

কিন্তু উত্তেজিত জনতা ফের মেন অবরোধ করেন। জেলা পুলিশ লাইনের বেশির ভাগ কর্মী করোনায় আক্রান্ত। ফলে পুলিশ ও মহিলা পুলিশেরা অবরোধ-বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমসিম খান। বিক্ষোভকারীরা হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বাধা দেয় পুলিশ। ইতিমধ্যে হাজির হন জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো।

ঝাড়গ্রামে করোনা নিয়ে ভাঙল ক্ষোভের বাঁধ

সত্যনারায়ণের মা দুর্গা দাস ও স্ত্রী টুম্পা দাস সহ তিনজন মহিলা সুপারের সঙ্গে দেখা করাতে যান। ওই সময়ে হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক অর্ণাশিস হোতাকে সামনে পেয়ে যান মৃতের পরিজনেরা।

অর্ণাশিসবাবু চিকিৎসক বলে চিনিয়ে দেন কেউ। অভিযোগ, এরপরই আচমকা অর্ণাশিসবাবুর উপর চড়াও হয় তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন মৃতের মা। এই ঘটনার পরে উত্তেজনা ছড়ায়। তড়িঘড়ি ফেস্টুন লেখা হয়। দুপুর দু’টো থেকে সুপার স্পেশালিটির আউটডোরের সামনে ধর্নায় বসেন সুপার সহ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
জেলাশাসক ও সিএমওইচ না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। হাসপাতালের কাজে জেলাশাসকের অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি করেন তাঁরা। করোনার রিপোর্ট পরিবর্তনের জন্য হাসপাতাল সুপারকে জেলা প্রশাসন থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকেরা।

এদিন ধর্নায় বসলেও জরুরি বিভাগে পরিষেবা দেওয়া হয়। এদিনই ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনাটি লিখিতভাবে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতরের প্রধানসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে জানিয়ে হস্তক্ষেপ করার আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : এক গানে কতো পারিশ্রমিক নেন বলিউডের কণ্ঠশিল্পীরা?

চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কিছু মানুষ ঠাণ্ডা ঘরে বসে নির্দেশ দিচ্ছেন। তার জেরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। জেলাশাসক তাঁর অফিস চেম্বারে চিকিৎসক প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডাকলেও কেউ যাননি।

সন্ধ্যায় সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা আসেন। তবে তিনি চিকিৎসকদের কাছে আলোচনার জন্য যাননি। সুপারের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। তবে এদিন চিকিৎসকদের আন্দোলনে তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সন্ধ্যায় আসেন তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সংসদ সদস্য উমা সরেন।

তিনি চিকিৎসকদের জানান, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন উমা। প্রাক্তন সাংসদের অনুরোধে রাতে কর্মবিরতি ওঠে। তবে চিকিৎসকরা জানান, দুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান ও চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা না হলে সোমবার দুপুর থেকে ফের কর্মবিরতি শুরু করবেন তাঁরা। এদিন সামগ্রিক ঘটনার প্রতিবাদে জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেয় বামেরা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button