ঝাড়গ্রাম: মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত সুপার হিট বাংলা ছবি ‘সন্ন্যাসী রাজা’। কিংবা উত্তম কুমার, বিকাশ রায় অভিনীত ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ থেকে হাল আমলের আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’-গত পাঁচ দশকে এক ডজনেরও বেশি বাংলা ছবিতে বারে বারেই দেখা গিয়েছে ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজ প্রাসাদ সহ ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ঝাড়গ্রামকে পর্যটকদের কাছে নতুন ভাবে হাজির করার জন্য চালু হয়েছে ফিল্ম ট্যুরিজম।
পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’ সংস্থার উদ্যোগে ফিল্ম ট্যুরিজম প্যাকেজও রয়েছে। ঝাড়গ্রামের যে সব জায়গায় কালজয়ী সব ছবির শ্যুটিং হয়েছে, সেই এলাকাগুলি পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। উত্তম কুমার অভিনীত সত্তরের দশকের ‘বাঘবন্দি খেলা’ ও ‘রাজবংশ’ ছবির দৃশ্যগ্রহণও হয়েছিল ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাসাদে।
আর সন্দীপ রায় পরিচালিত ফেলুদা-কাহিনী ‘টিনটোরেটোর যিশু’ ছবিতে আস্ত রাজপ্রাসাদটাকেই নিয়োগী বাড়ি হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণার ‘আবেদন’ নিয়ে খোলাখুলি বললেন প্রসেনজিৎ
‘বাদশাহী আংটি’-র শেষদৃশ্যে যেখানে ফেলুদা-তোপসেকে একটি জঙ্গলের মাঝে কাঠের ঘরে বন্ধ করে বিষাক্ত সাপ ছেড়ে দিয়েছিলেন বনবিহারীবাবু, সেই জঙ্গলটি আসলে ছিল ঝাড়গ্রামের কলাবনির জঙ্গল।
আবার সত্তরের দশকের শেষের দিকে চিন্ময় রায় অভিনীত টেনিদা-কাহিনী ‘চারমূর্তি’ ছবির বেশির ভাগ অংশের দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরের জঙ্গলে ও বন বাংলোয়। হাল আমলের ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’ ছবির দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল ঝাড়গ্রাম রাজ প্রাসাদ ও চিল্কিগড় রাজপ্রাসাদে।
এছাড়াও ‘বেহুলা লখীন্দর’, ‘অরুন্ধতী’, ‘আমার মায়ের শপথ’, ‘ব্রেক ফেল’, ‘মেঘনাদ বধ রহস্য’-এর মতো বেশ কিছু ছবির শ্যুটিং হয়েছে ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।
‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘এখানে সে সব জায়গায় বিখ্যাত সব সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে সেই এলাকাগুলি পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য চালু হয়েছে ফিল্ম ট্যুরিজম।”
সুমিত জানান, বেড়ানোর আগে পর্যটকদের একটি ভিডিও ফিল্মের লিঙ্ক দেওয়া হচ্ছে। তাতে ঝাড়গ্রামে দৃশ্যগ্রহণ হওয়া ছবির অংশগুলি রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ব্যোম ভোলে’ গানে তুমুল নাচলেন অক্ষয় কুমার, দেখুন ভাইরাল সেই ভিডিও
পর্যটকেরা সেগুলি দেখে তারপর এলাকাগুলি ঘুরে দেখে যাতে আনন্দ নিতে পারেন, সেই জন্যই এমন উদ্যোগ। তবে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, সেভাবে বাংলা ছবির আউটডোর লেকেশন হিসেবে ঝাড়গ্রামকে ব্যবহার করা হচ্ছে না।
একসময় বাংলা ছবির ইউনিটের দৌলতে বাড়তি দু’টো পয়সার মুখ দেখতেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এলাকার আদিবাসী-মূলবাসী মানুষেরাও পরোক্ষে লাভবান হতেন। কিন্তু সেই সুদিন আর নেই।
অথচ ঝাড়গ্রাম জেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়, টিলা, জঙ্গল, নদী, প্রাচীন পুরাকীর্তি, কয়েকটি প্রাচীন রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়ি। এমন জায়গায় কম খরচে শ্যুটিং করার সব রকম উপাদান মজুত রয়েছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, এখানে ফিল্ম ইউনিটগুলি নিয়মিত ছবির কাজ করলে পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় আদিবাসী-মূলবাসী মানুষেরাও উপকৃত হবেন।