বিচিত্রতা

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান

যুগে যুগে অনেক শাসক, রাজা শাসন করেছেন বিশ্বকে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন। কেউ আবার বিতর্কিত। তবে মৌলে ইসমাইল যে রেকর্ড গড়েছিলেন, তা এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি। হাজারখানিক সন্তানের জনক ছিলেন এই শাসক।

সাতরঙের আজকের আয়োজন থাকছে এই শাসককে নিয়েই। মৌলে ইসমাইল ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর সিজিলমাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আলাউইট রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক। এখনও এই রাজবংশ মরক্কোকে শাসন করছে। পনেরোজন ভাইয়ের মধ্যে মৌলে ইসমাইল ছিলেন সপ্তম। তিনি ১৬৬৭ থেকে ১৬৭২ সাল পর্যন্ত মরক্কোর ফেজের কিংডমের গভর্নর ছিলেন। এরপর তার সৎ-ভাইয়ের মৃত্যু হলে তিনি শাসক হন।

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান
মৌলে ইসমাইল রক্ত নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন

তিনি অত্যন্ত নির্মম ছিলেন। তার রাজত্বকাল ফেজের দেয়ালে ৪০০ বিদ্রোহীর মাথা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। তিনি ১৬৩০ সালে ফেজে সুলতান ঘোষিত হওয়ার আগে তার ভাগ্নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। মৌলে ইসমাইল সিংহাসনে বসার আগে মাত্র ৫৫ বছর ধরে এই বংশ মরক্কো শাসন করেছিল। ইতিহাস এই সুলতানকে তকমা দিয়েছে রক্তপিপাসু।

আরও পড়ুন : তিমির বমিতে রাতারাতি কোটিপতি মৎস্যজীবী

রক্তের নেশা সারাক্ষণ তাকে তাড়না করে বেড়াত। মানুষ হত্যা করা তার কাছে ছিল খেলার মতো। মৌলে ইসমাইলের শাসনকাল রাজকীয় ইতিহাসের এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তার আগে বা পরে কোনো রাজার রাজত্বকাল এতোটা স্থায়ী ছিল না। তার ক্ষমতা গ্রহণের আগে, মরক্কান রাজতন্ত্ররা পুরুষ শাসক সরবরাহের জন্য উপজাতিদের উপরই নির্ভর করত। তবে মৌলের রাজত্বকালে এই ধারনার অবসান ঘটে।

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান
তার হেরেমে ছিল অবেক দাসী

মৌলে তার অঞ্চলকে সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত করে ব্ল্যাক গার্ড বাহিনী। যেখানে ছিল পুরোপুরি কালো দাসদের একটি বাহিনী। যা আবিদ আল বুখারি বা বুখারীর দাস নামে পরিচিত। এই সৈন্যবাহিনী দিয়েই সে তার সব ইচ্ছা হাঁচিল করত। এই বহরটি ক্রমবর্ধমান ভূমধ্যসাগর থেকে কৃষ্ণ সাগরের সর্বত্র অভিযানের মাধ্যমে সুলতানকে ক্রমাগত খ্রিস্টান অস্ত্র এবং দাস সরবরাহ করেছিল।

আরও পড়ুন : মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া নম্বরে সাড়ে ৫ কোটি টাকার লটারি জিতলেন মহিলা

মরক্কো কিংডম ইসমাইলের রাজত্বকালে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, বিশেষত ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন এবং স্পেনের রাজ্যের সঙ্গে। ইউরোপীয়রা তার নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার কারণে তাকে “ব্লাডি ব্লু কিং” বা “ব্লাথ থারস্টি” নাম দিয়েছিল। মরক্কোতে, তিনি “ওয়ারিয়র কিং” হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান
দাসীরা সব সময় রাজাকে খুশি রাখার চেষ্টা করত

এত এত বিতর্কিত বিষয় থাকার পরও ইতিহাসে এমনকি পরবর্তীতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠে আসে। মৌলে ইসমাইল ৮৮৮ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা রেকর্ড করা ইতিহাসের সর্বোচ্চ সন্তানের জনক।

আরও পড়ুন : নতুন বৌয়ের কা’ন্না’য় ভিজে গেলো মেকাপ, মেকাপ গলতেই বেরিয়ে গেলো যুবতীর আসল মুখের রং, তু’মু’ল ভাইরাল ভিডিও!

এক প্রতিবেদনে, ফরাসী কূটনীতিক ডোমিনিক বুসনট যিনি প্রায়শই মরক্কোতে অভিযান চালিয়ে গিয়েছিলেন, বলেছেন যে সুলতানের আসলে চার স্ত্রী ও ৫০০ জন উপপত্নী ছিল। যাদের মোট ১১১ জন শিশু ছিল। প্রতিবেদনটি করার সময়, ইসমাইলের বয়স ছিল ৫৭ বছর এবং ৩২ বছরের শাসনকাল। তবে বিভিন্ন নথি পত্র এবং ইতিহাসবিদদের মতে তার সন্তান সংখ্যা ছিল ৮৮৮ জন। বেশিরভাগ শিশুই ছিল অবৈধ। তার উপপত্নীদের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয় হাজারের বেশি হবে।

রক্তপিপাসু এক রাজার হাজারখানেক সন্তান
এই শাসকের ছিল হাজারখানেক সন্তান

ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ দ্বারা তৈরি সিমুলেশন অনুসারে, সুলতানকে বহু বংশ চালানোর জন্য প্রতিদিন গড়ে শূন্য দশমিক আট তিন থেকে এক দশমিক চার তিনবার যৌনমিলনের প্রয়োজন ছিল। গবেষকদের মতে এটি করার জন্য তার হেরেমে ছিল ৬৫ থেকে ১১০ জন নারী। বাকিগুলো ছিল যুদ্ধের পর ধরে আনা নারীরা। বেশিরভাগই তার হেরেমে এবং পুরো মরক্কোতে দাসের কাজ করত।

আরও পড়ুন : ২৭ বছর আগের ভ্রূণ থেকে শিশুর জন্ম!

তবে যতই নির্মম হন না কেন, তার আমলেই মরক্কোতে শান্তি ফিরে এসেছিল। তার শাসনকালকে একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এখনো। সেই সময়কালে সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষিত হয়েছিল। তিনি দেশকে একীভূত করেছিলেন এবং যথেষ্ট পরিমাণে প্রসারিতও করেছিলেন। রাজ্যের চারপাশে অসাধারণ সব শৈলী স্থাপত্য নির্মাণ করেছিলেন।

সুত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

আরও পড়ুন ::

Back to top button