বলিউড

‘কিস’র দৃশ্যে অভিনয়ে না, হুমকিও পান সমীরা

‘কিস’র দৃশ্যে অভিনয়ে না, হুমকিও পান সমীরা - West Bengal News 24

মোটাসোটা টম বয়ের মতো চেহারায় চোখে ভারী চশমা। ১৯ বছর বয়স অবধি তার চেহারা থেকে বহু দূরে অবস্থান করতো ‘গ্ল্যামার’ বিশেষণটি। সেখান থেকেই বলিউডের আকর্ষণীয় নায়িকা হয়ে ওঠেন সমীরা রেড্ডি।

অন্ধ্রপ্রদেশের রাজামুন্দ্রিতে তার জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর। তার বাবা তেলুগু এবং মা কন্নড়। দুই দিদি মেঘনা এবং সুষমার সঙ্গে সমীরার শৈশব অবশ্য কেটেছে মুম্বাইয়ে। মেঘনা এবং সুষমা দু’জনেই বিনোদন দুনিয়ার অংশ। মেঘনা ভিডিও জকি এবং সুপারমডেল। সুষমা অভিনেত্রী এবং মডেল। ৩ বোনের উপরেই তাদের মা নক্ষত্রের গভীর প্রভাব।

বিনোদন দুনিয়ার বিপরীত মেরুতে থাকা নক্ষত্র একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। তবে তিনি মেয়েদের ইচ্ছাপূরণে বাধা দেননি। মাকে আদর করে ‘নিকি’ বলে ডাকেন তিন মেয়ে। তাদের বাবা পেশায় ব্যবসায়ী।

সমীরার কথায় তিনি ছিলেন পরিবারের মধ্যে ‘আগলি ডাকলিং’ বা ‘কুৎসিত হাঁসের ছানা’। ছোটবেলায় বা তার পরে কৈশোরে গ্ল্যামার দুনিয়ায় পা রাখার কোনো ইচ্ছে ছিলো না সমীরার। তবে দিদিদের দেখে ক্রমে সেই স্বপ্ন মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে থাকে। যত্ন নিতে থাকেন নিজের চেহারার। বুঝতে পেরেছিলেন, বিনোদন দুনিয়ায় থাকতে হলে বহিরঙ্গে সুন্দর হতেই হবে। কঠোর ডায়েটিং করে নিজের ৩০ কেজি ওজন কমান সমীরা।

বম্বে স্কটিশ স্কুল এবং সিডেনহ্যাম কলেজ থেকে পড়াশোনার পরে মডেলিং শুরু করেন সমীরা। ১৯৯৭ সালে তিনি পঙ্কজ উধাসের একটি গজলের ভিডিওতে অভিনয় করেন। মিউজিক ভিডিওর নাম ছিলো ‘অউর আহিস্তা’।

আরও পড়ুন : বলিউড কাঁপানো শাহেনশাহের ছোটবেলার ছবি, পারছেন কি চিনতে?

এই মিউজিক ভিডিও থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে সকলের নজর কেড়ে নেন সমীরা। ২০০০ সালে সমীরার প্রথম অভিনয় করার কথা ছিলো তামিল ছবি ‘সিটিজেন’তে। কিন্তু শেষ অবধি এই সুযোগ তার হাতছাড়া হয়ে যায়।

নায়িকা হিসেবে সমীরা আত্মপ্রকাশ করেন ২০০২ সালে। সালমানের ভাই সোহেল খানের ছবি ‘ম্যায়নে দিল তুঝ কো দিয়া’-য়। সোহেল এবং সমীরা, দু’জনেরই এটা ছিলো প্রথম ছবি। প্রথম ছবি বক্স অফিসে বিশেষ কিছু সাফল্য না পেলেও সমীরা নজরে পড়েন দর্শকদের। তার পরের দু’টি ছবি ‘ডরনা মানা হ্যায়’ এবং ‘প্ল্যান’-ও অবশ্য তাকে বিশেষ পরিচিতি দেয়নি ইন্ডাস্ট্রিতে।

২০০৪ সালে বহু তারকাখচিত ছবি ‘মুসাফির’তে অভিনয় করেন সমীরা। বলা হয়, এই ছবি থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে তার গুরুত্ব এক লাফে অনেক বেড়ে যায়। সাহসী এবং আবেদনময়ী নায়িকা রূপে নিজেকে দর্শকদের সামনে হাজির করেন তিনি।

সে সময় বলিউডে বোল্ড নায়িকাদের সময় ভালোই ছিলো। মল্লিকা শেরাওয়াত, বিপাশা বসু, কোয়েনা মিত্র, সেলিনা জেটলীর মতো অভিনেত্রীরা দাপটের সঙ্গে কাজ করছিলেন। এবার সেই তালিকায় যোগ হলেন সমীরাও। কিন্তু বলিউডে যে চরিত্রগুলো পাচ্ছিলেন, সেগুলোতে মন ভরছিলো না সমীরার।

তিনি দক্ষিণী ছবিতেও অভিনয় শুরু করেন। তবে এতো তাড়াতাড়ি বলিউডে হাল ছাড়ার পাত্রীও ছিলেন না সমীরা। তিনি সালমানের দ্বারস্থ হন। সালমানের কথায় ‘নো এন্ট্রি’ ছবিতে ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন সমীরা। এরপর ‘ট্যাক্সি নম্বর ৯২১১’ ছবিতেও অভিনয় করেন। কিন্তু বলিউডে প্রথম সারিতে জায়গা পাচ্ছিলেন না তিনি। করিনা-ক্যাটরিনাদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছিলেন প্রতিযোগিতায়। বরং, দক্ষিণী ছবিতে তিনি অনেক বেশি সাফল্য পান।

আরও পড়ুন : মালাইকাকে ছেড়ে শ্রদ্ধার দিকে ঝুঁকছেন অর্জুন?

বলিউড নিয়ে বার বার আক্ষেপ ঝরে পড়েছে সমীরার কণ্ঠে। তার অভিযোগ, তিনি ‘মজা’ করেন না বলে এক নায়ক তার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হননি। একটি ছবিতে ‘লিপলক কিস’র দৃশ্যে অভিনয় করবেন না বলে তাকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেন পরিচালক। কিন্তু শুটিং শুরুর আগে ওই দৃশ্য নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি বলে অভিনয়ে রাজি করানো যায়নি সমীরাকে।

সমীরা যখন বলিউডে কাজ করছিলেন তখন পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তর সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা শোনা যায়। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সামশুর লালানির সঙ্গেও তার প্রেম ছিলো বলে গুঞ্জন। দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতে এনটিআর জুনিয়রের সঙ্গেও তার প্রেম ছিলো বলে দাবি নায়িকার ঘনিষ্ঠ মহলে। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি যখন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া নায়িকা, তখন তাকে আবার ডাকে বলিউড। তিনি অভিনয় করেন প্রিয়দর্শনের ছবি ‘তেজ’তে। কিন্তু এই ছবি আশানুরূপ ফল করেনি বক্স অফিসে। তবে অন্যদিক দিয়ে এই ছবি সমীরার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

২০১২ সালে ‘তেজ’তে অভিনয় করার সময়েই তার সঙ্গে আলাপ হয় অক্ষয় বর্দের। সিনেমার জন্য কাস্টমাইজড বাইকের যোগান দিতেন অক্ষয়। ২ বছরের প্রেমপর্বের পরে অক্ষয়কে বিয়ে করেন সমীরা। বিয়ের পরে অভিনেত্রী জীবনকে সম্পূর্ণ বিদায় জানান সমীরা। তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয় নিজের সংসার। ২০১৫ সালে জন্ম হয় তার প্রথম সন্তান হন্স’র। সে সময় সমীরার ওজন হয়ে গিয়েছিলো ১০২ কেজি।

নিজের চেহারা এতোটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, বাড়ি থেকে বেরনোই বন্ধ করে দেন তিনি। শুধু মনে হতো, লোকে কী বলবে তাকে দেখে! ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এই মানসিকতা সমীরা কাটিয়ে ওঠেন দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময়। লোকে তাকে কী বলবে, সেই চিন্তা মন থেকে সরিয়ে তিনি ঝেড়ে ফেলেন হীনমন্যতাকে। নিজের চেহারা লুকিয়ে না রেখে গর্ভাবস্থার প্রতি মুহূর্ত উপভোগ করতে থাকেন।

আরও পড়ুন : নিজেকে আরো বেশি আবেদনময়ী করতে নিতম্বে অস্ত্রোপচার মডেলের, অতঃপর …

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার ছবি শেয়ারও করতেন তিনি। গ্ল্যামারাস হওয়ার চেষ্টা না করে চেয়েছিলেন তিনি আসলে যেমন, সেই প্রকৃত চেহারাই সকলের সামনে তুলে ধরতে। বেবি বাম্পের ছবি দিয়ে বাহবা পাওয়ার পাশাপাশি ট্রোলডও হন তিনি।

সমীরা বলেন, সেলেব হয়ে গেলেই কোনো মহিলার প্রেগন্যান্সি গ্ল্যামারাস হয়ে যায় না। প্রত্যেক মেয়েকেই সন্তানধারণের সময় নানা শারীরিক সমস্যা সহ্য করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘গ্ল্যামারাস প্রেগন্যান্সি’ বলে যা ছবি দেওয়া হয়, সে সব আসলে নকল। মত ‘রেস’র নায়িকার। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরে নিজের মোটা চেহারার ছবিও শেয়ার করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তার চেহারায় ‘স্কার’র চিহ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু তিনিও দু’টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তার হরমোনাল সমস্যা হতে পারে। বডি শেমিং নিয়ে যারা ট্রোল করতেন, এই বার্তা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি।

একইসঙ্গে যে মেয়েরা সবসময় নিজেদের ফিগার নিয়েই ভাবেন, তাদেরও নকল দুনিয়া থেকে বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে বলেন সমীরা। অনুরাগীদের আশা, সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি তিনি ফিরে আসবেন সিনেমার পর্দাতেও। তবে আপাতত সমীরা জীবন উপভোগ করছেন তার স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে।

গত বছর নিজের ২ মাসের মেয়ে নাইরাকে নিয়ে আরোহণ করেছিলেন কর্নাটকের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, ৬৩০০ ফুট উচ্চতার মূল্যায়নগিরিতে। ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি শেয়ার করে জানান, পাহাড়ে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট হয়েছিলো তার। সে জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুকন্যাকে খাওয়াতেও ভোলেননি। তার মনের জোর দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন অনুরাগীরা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button