Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
সাহিত্য

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’

দীপাঞ্জন দে

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’

দেশি প্রজাতির ধান উৎপাদনে আগ্রহী কৃষকদের কাছে ‘বসুধা’ একটি পরিচিত নাম। প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেবের মস্তিষ্কপ্রসূত বসুধায় কৃষি বিজ্ঞানে আগ্রহী মানুষদের আনাগোনা লেগেই থাকে। সেই তালিকায় সাধারণ চাষী থেকে গবেষক, বিজ্ঞানী, প্রকৃতিপ্রেমী— কে নেই! প্রথমবার বসুধায় এসেই যেন মুগ্ধতা আচ্ছন্ন করে। প্রাণের টানে, মাটির টানে তারা বারে বারে বসুধায় আসেন। বাঁকুড়া জেলার বিনোদবাটি গ্রামে দেশীয় প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরপুর এই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বসুধার প্রতিষ্ঠাতা ড. দেবল দেব।

প্রকৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য তাঁর যে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, সেই নিরলস সংগ্রামেরই স্থায়ী রূপ হল বসুধা। এখানে জৈবকৃষি পদ্ধতিতে চাষবাস থেকে শুরু করে ধান সংরক্ষণ, দেশীয় প্রজাতির গাছপালা সংরক্ষণ, ইকোলজিকাল আর্কিটেকচার, বিকল্প শক্তির ব্যবহার— সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, জল সংরক্ষণ, ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশন প্রভৃতির বব্যবস্থ রয়েছে।

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’

আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা থেকে শুরু করে লাল শিরীষ, শ্বেত শিরীষ, বাগান শিরীষ, শিমুল, বকুল, গাব, চালতা, পাকুড়, পিপুল, ছাতিম, পান, করঞ্জ, ধঞ্চে, ময়না মন্তা, মহুয়া, চুর্চুমন, আঁচ, ময়না মন্তা, মহানিম, বেঁচকুল, খুদিজাম, ডুমুর, শেওড়া, গুড়মারের মতো অসংখ্য দেশীয় প্রজাতির গাছপালায় ভরপুর বসুধার জঙ্গল।

বসুধায় থাকার জন্য রয়েছে একটি দোতলা মাটির বাড়ি। এই মাটির বাড়িটি তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ স্থানীয় পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতিতে। বাড়িটি তৈরি করতে কোনো সিমেন্ট, পোড়ানো ইট, প্লাস্টিক, কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়নি। চিরাচরিত দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটি তৈরি করার জন্য কোনো গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়নি, যা পরিবেশের ক্ষতি করে। সূর্যের অবস্থানকে মাথায় রেখে এমনভাবে বাড়িটির পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে গ্রীষ্মকালে বাড়ির জানালা দরজা দিয়ে সূর্যালোক কম ঢোকে এবং তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

প্রকৃতিরক্ষক দেবল দেব এবং ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’

আর অন্যদিকে শীতকালে যাতে সূর্যালোক বেশি ঢুকে ঘরগুলিকে গরম রাখতে পারে। বাড়িটিতে প্রচলিত শক্তিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় না, সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে আলো জ্বালানো হয়, পাখা চালানো হয়। জমির উর্বরতার বিষয়টি মাথায় রেখে ইকোলজিক্যাল স্যানিটেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পরিবেশবিদ ড. দেবল দেবের পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি একাগ্র নিষ্ঠা এবং তাঁর কয়েকজন কৃষক বন্ধুদের সহযোগিতার ফলে এই বিরাট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।

ফলত, ড. দেবল দেব এবং তাঁর গড়ে তোলা বসুধা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র মতো পরিবেশ পত্রিকাগুলির অন্যতম প্রেরণা। গোবরডাঙা জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা সমিতির মুখপত্র হিসেবে ২০২০ সাল থেকে পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’ (Bio-diversity Conservation News Letter) প্রকাশ পাচ্ছে।

এটি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত একটি ত্রৈমাসিক পরিবেশ পত্রিকা। এর প্রকাশক বরিষ্ঠ বিজ্ঞান প্রচারক দীপককুমার দাঁ, গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ। এই পত্রিকার অন্যতম উদ্দেশ্য হল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। পরিবেশবিদ ড. দেবল দেব দীর্ঘদিন ধরে সেই কাজেই ন্যস্ত। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-য় পরিবেশের বিভিন্ন খবরা খবরের পাশাপাশি পরিবেশ-বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিবেদন, নিবন্ধ, কবিতা প্রভৃতি থাকে। বাংলার পরিবেশ সংগঠনগুলির কাজকর্মের খবরা খবর এই পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যায় কমবেশি জায়গা করে নেয়। বিজ্ঞান, পরিবেশ নিয়ে যারা দেশব্যাপী কাজ করে চলেছেন তাদের কর্মসূচিগুলি ডকুমেন্টেশনের একটি ঠিকানা হয়ে উঠেছে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’।

‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র পাতায় একাধিকবার দেবল দেব এবং বসুধার কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র তৃতীয় বর্ষের তৃতীয় সংখ্যাতেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২২) বসুধার কথা রয়েছে, প্রচ্ছদেও রয়েছেন প্রকৃতিরক্ষক ড. দেবল দেব। হবে নাই বা কেন? বায়োপাইরেসি বা বীজডাকাতির হাত থেকে দেশীয় ধানের বৈচিত্র্যকে রক্ষা করার যে লড়াই ড. দেবল দেব শুরু করেছিলেন, তাতে ‘টিম বসুধা’ এখনো অবিচল। তাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলেই হারিয়ে যাওয়া দেশীয় ধান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, লুপ্তপ্রায় বিভিন্ন উদ্ভিদকে বাঁচানো— প্রভৃতি সকল কাজ সম্ভব হচ্ছে। তিনিই তো আমাদের প্রকৃতিরক্ষক!

লেখক: সম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’

আরও পড়ুন ::

Back to top button