বর্ধমান

গ্যাসের দাম বাড়ায় ঘরে গ্যাস থাকলেও তা কার্যত শো-পিসে পরিণত হয়েছে, ভরসা কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটো

গ্যাসের দাম বাড়ায় ঘরে গ্যাস থাকলেও তা কার্যত শো-পিসে পরিণত হয়েছে, ভরসা কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটো

দাম নেই ফসলের তার উপর রান্নার গ্যাসের দাম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। যার জেরে কার্যত নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে সাধারণ জনগণ সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে যেতে বসেছে গ্যাস। যার জেরে আবারও পুরনো পন্থা উনুনে ভরসা রাখছেন অনেকে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগ পরিবারেই রান্নার উনুন জ্বালাতে এখনও কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটোই ভরসা। শহরাঞ্চলে প্রায় ৭৬ শতাংশ পরিবারের রান্নাঘরে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার হয় ঠিকই। কিন্তু গ্রামে গেলেই ছবিটা উল্টে যায়। গ্রামের ৭৬ শতাংশ পরিবারেই রান্না হচ্ছে কাঠকুটো, শুকনো ডালপালা বা খড়কুটো জ্বালিয়ে।

রান্নার গ্যাসের ক্রম বর্ধমান মূল্য নিয়ে শাসক বিরোধী তরজা চলছেই। কিন্তু এরই মাঝে আম বাঙালির রান্না ঘরে গ্যাস থাকলেও তা ব্যবহারে অনিহা দেখা দিয়েছে শুধুমাত্র মূল্যবৃদ্ধির কারণে। আবারও ধোঁয়া সহ্য করে কাঠ, কয়লার উনুনেই রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন মহিলারা। প্রত্যেক মহিলারাই চাইছেন দ্রুত সরকার দাম কমানোর ব্যবস্থা করুক রান্নার গ্যাসের। মধ্যবিত্তের নাগালে আসুক গ্যাস, যাতে কষ্ট লাঘব হয় সাধারণ মহিলাদের।

এর ফলে অন্য একটি সমস্যাও বাড়ছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তা হল, কাঠকুটোয় রান্না করতে হলে মহিলাদেরই ভোরে উঠে তা জোগাড় করতে বের হতে হচ্ছে। ফলে রান্নার ধোঁয়ার সঙ্গে বাড়তি পরিশ্রমের ধকল নিতে হচ্ছে। সংসারের কাজ সামলে বাড়তি রোজগারের জন্য সময়ও কমে যাচ্ছে। সেটা মাথাপিছু আয় কমিয়ে দিচ্ছে।

জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার তরফ থেকে জানা যায় ‘পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা বাদ দিলে গ্রামের মানুষের মাথাপিছু আয় এমনিতেই কম। কোভিডের ধাক্কায় রোজগার কমে যাওয়ার ফলে রাজ্যের গরিব পরিবার আরও বেশি সমস্যায় পড়েছেন। তা ছাড়া বেশ কিছু দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির হার অধিকাংশ রাজ্যের থেকে বেশি। বিশেষত গ্রামে। ফলে গ্রামের গরিব মানুষের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দামি এলপিজি সিলিন্ডার ছেড়ে তাঁদের কাঠকুটো জ্বেলেই ভাত রাঁধতে হচ্ছে।”

সমীক্ষাও দেখা গিয়েছে, দেশে শহরের ৮৯ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করলেও গ্রামের মাত্র ৪৯.৪ শতাংশ পরিবার রান্নার গ্যাস ব্যবহার করছে। কাঠ, শুকনো ডাল, খড়কুটোয় কাজ চালাচ্ছে শতকরা ৪৬.৭ ভাগ পরিবার। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ছবিটা আরও করুণ। এ রাজ্যের গ্রামের ৭৬ শতাংশ পরিবারই কাঠ বা খড়কুটোয় রান্না করছেন। কয়লা, ঘুঁটে বা কেরোসিন কেনার সামর্থ্যও তাঁদের নেই।

বিজেপি বিরোধী দল গুলির দাবি,-ভোট কুড়োতে বিজেপি নেতারা প্রচারে বলেছিলেন, রান্নার উনুনের ধোঁয়া থেকে মহিলাদের শরীরে দিনে ৪০০টি সিগারেটের সমান ধোঁয়া ঢোকে। প্রধানমন্ত্রী তা থেকে মহিলাদের রক্ষা করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগ রান্নার গ্যাসের সংযোগ নিখরচায় পেলেও মোদী জমানায় এক হাজার টাকা পার করে ফেলা সিলিন্ডার গরিবদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে গরিবরা ফের গ্যাসের উনুন ছেড়ে কাঠকুটো জ্বালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button