বর্ধমান

ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে ফুটপাত; ব্যবসায়ীদের দখলে রাস্তা

ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে ফুটপাত; ব্যবসায়ীদের দখলে রাস্তা

ফুটপাত তুমি কার? শিক্ষিত বা অশিক্ষিত সবার একটাই উত্তর – পথিকের এবং সেটাই স্বাভাবিক । কিন্তু সেই স্বাভাবিক উত্তর আজ অস্বাভাবিকে পরিণত হয়েছে। সৌজন্যে স্থানীয় এক শ্রেণির নেতার দাদাগিরি ও অর্থের প্রতি লোভ এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব।

কালনা থেকে কাটোয়া, বর্ধমান থেকে গলসী হয়ে গুসকরা, শহর বা আধা শহর – ফুটপাত দখলের গল্পটা সর্বত্র সেই একই। শুরুটা হয় অস্থায়ী কাঠামোর হাত ধরে। তারপর কখন যে সেটা স্থায়ী কাঠামো হয়ে ফুটপাত অতিক্রম করে প্রধান সড়কে নেমে আসবে ধরতেই পারা যাবেনা। এ যেন ‘ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরিয়ে আসা’।

গলসী বাজারে ফ্লাইওভারের পাশে বর্ধমান থেকে দুর্গাপুরগামী রাস্তায় ফুটপাত বলে কার্যত কিছু নাই। সারা বছর কার্যত সেখানেই ব্যবসায়ীরা মালপত্র রাখে। ফুটপাত ছাড়িয়ে সব্জি ও ফলের দোকান বসেছে রাস্তার উপর। যেটুকু ফাঁকা ছিল ইদের সৌজন্যে সেটাও দখল হয়ে গ্যাছে। দেখলে মনে হবে আসলে ওটা বাজার। দয়া করে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়া আছে। এর সাথে রাস্তার উপর পার্কিং তো আছেই। পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় হলেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় না।

চলছে চৈত্র সেল। গুসকরা রেলগেট থেকে বাসস্ট্যান্ড, রামতারণ রোডের অবস্থা দেখলে মনে হবে রাস্তাটা হয়তো সেল হয়ে গেছে। বিকেলের দিকে যেভাবে ভিড় বাড়ে তখন চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। রাস্তা পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে রেলগেটের সামনে দীর্ঘ যান জটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।

অন্যান্য শহরের গল্পটা আলাদা কিছু নয়। কমবেশি সর্বত্র একই চিত্র ধরা পড়ে। মাঝে মাঝে প্রশাসন সক্রিয় হলেও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয় না। দুর্গাপুজো থেকে বড়দিন, চৈত্র সেল থেকে ইদ – সমস্ত ধর্মীয় উৎসবে বিষয়টি তো বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছে যায়। দোকান, ফুটপাত,সড়ক – সব মিলেমিশে একাকার। এ যেন এক ত্রিবেণী সঙ্গম। অতিরিক্ত কিছু আয়ের আশায় গ্রামের ছোটছোট ব্যবসায়ী বা হকাররা ছুটে আসে শহরে। বসে পড়ে রাস্তা দখল করে। সেই সুযোগে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানের সামনের দিকের অংশটা কিছুটা সম্প্রসারণ করে নেয়। পরে সেটা থেকেই যায়। প্রধান সড়ক ছোট হতে হতে গলি হয়ে গ্যাছে, ফুটপাত উধাও। যানবাহন থেকে পথিক সবাই সমস্যায় পড়ে।

তারপর তাদের আর সরানো যায়না। সরাতে গেলেই ঝামেলা, রাস্তা অবরোধ, সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি। সামনে চলে আসবে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা। যে নেতারা অর্থের বিনিময়ে তাদের বেআইনিভাবে বসার সুযোগ করে দিয়েছে তারা দু’পক্ষই বজায় রাখতে চেষ্টা করে। ভোট বড় বালাই। রাস্তা চুলোয় যাক, একজনের জন্য হাজার জনের অসুবিধা হলেও তাদের কিছু যায় আসেনা, অর্থের আমদানি হলেই হল ।

দীর্ঘদিন ধরেই এই রাজ্যে এই পরিস্থিতি চলে আসছে। আগে সেভাবে চোখে না পড়লেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাটা চোখে পড়ছে। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও প্রতিবাদ করার উপায় নাই।

আরও পড়ুন ::

Back to top button