বিরক্ত ‘খড়ু’র দাঁতের ঘায়ে মৃত গ্রামবাসী
স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: গত কয়েক বছরে মানুষের সঙ্গে মিশে একেবারে ঘরোয়া হয়ে গিয়েছিল খড়ু। খিদে পেলে গদাইলস্করি চালে ঝাড়গ্রাম-লোধাশুলি রাজ্য সড়কের গড় শালবনি এলাকায় পণ্যবাহী লরি থামিয়ে খাবার আদায় করে থাকে রেসিডেন্সিয়াল হাতিটি। কখনও গ্রামে ঢুকে গৃহস্থের উঠোনের কলাগাছ, গোলার ধান সাবাড় করে। সুযোগ পেলে স্কুল বাড়ির রান্না ঘরের দরজা ভেঙে মিড ডে মিলের চাল খেয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও খড়ু বেশ পারদর্শী।
আপাতশান্ত হাতিটি কোনওদিন কারো ক্ষতি করেনি বলেই জানাচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সেই খড়ুই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেজাজ হারিয়ে পেটে দাঁত ঢুকিয়ে মেরে ফেলল এক ব্যক্তিকে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে শালবনি এলাকার একটি আম বাগানের এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তবে বন দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্য, বন্যপ্রাণীরাও অনুভূতিপ্রবণ। তাদেরও সহ্যের সীমা রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে খড়ু গড়শালবনি এলাকার ক্রিস গার্ডেনের কাছে একটি আম বাগানে আম খেতে ঢুকেছিল। এলাকার কিছু অত্যুৎসাহী লোকজন আমবাগানে ঢুকে খড়ুকে উত্যক্ত করতে থাকেন। এমনটাই জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বিভাগীয় বন আধিকারিক বাসবরাজ এস হলেইচ্চি।
তিনি বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা ক্রমাগত হাতিটিকে উত্যক্ত করার মেজাজ হারিয়ে খড়ু এক ব্যক্তিকে দাঁত দিয়ে আঘাত করেছে। তার ফলে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।” বন দপ্তরের দাবি, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা হাতিটিকে ভীষণ রকম উত্যক্ত করছিলেন। ওই দলে ছিলেন পেশায় চাষী বসন্ত মাহাতো (৪২) ওরফে মদন। যদিও বসন্তের পরিবারের দাবি, তিনি হাতিটিকে উত্যক্ত করেননি। বরং উত্যক্তকারীদের হাত থেকে হাতিটিকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় ও বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় খড়ু বসন্তকে সামনে পেয়ে পা দিয়ে আঘাত করে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয়। তারপর বসন্তের পেটে দাঁত ঢুকিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় হাতিটি। ঘটনাস্থলেই বসন্তের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও বন কর্মীরা গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে পাঠায়।
বন্যপ্রাণীকে উত্যক্ত না করার জন্য বার বার প্রচার করে বন দপ্তর। কিন্তু তাতে যে একাংশ গ্রামবাসী কর্ণপাত করেন না, বসন্তের মৃত্যুর ঘটনায় সেটা প্রমাণিত বলে বলে দাবি করছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা।