ঝাড়গ্রাম: চৈত্রের ঠা-ঠা রোদে ঘেমেনেয়ে ওঠা তৃষ্ণার্ত মহিলাটির দিকে শীতল শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিলেন বাম যুব কর্মীটি। আগে কোলের শিশু সন্তানের গলা ভিজিয়ে তারপর তৃপ্ত হলেন মা। শুক্রবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড়ে শিবির করে পথচলতি মানুষজনকে বিনামূল্যে লেবুর শরবত ও লস্যি খাওয়ানোর আয়োজন করেছিলেন ঝাড়গ্রাম শ্রমজীবী ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ।
এদিন সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ওই সেবামূলক কর্মসূচি হয়। ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথা মোড়ে প্রায় এক হাজার জনকে খাওয়ানো হয় শরবত ও লস্যি। ক্যান্টিনের পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য সিপিআই নেতা প্রতীক মৈত্র জানালেন, দুর্বিষহ গরমে নাজেহাল পথচারীদের স্বস্তি দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। এদিন ছ’শো জনকে লস্যি ও চারশো জনকে কমলালেবুর সরবত খাওয়ানো হয়। পথচলতি সাধারণ মানুষ, স্টপে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের যাত্রীর মত অনেকেই লস্যি ও শরবতের গ্লাসে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে শরীর জুড়িয়েছেন।
গত বছর ১ অক্টোবর থেকে সিপিআইয়ের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরে চালু হয়েছে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’। রেল স্টেশন লাগোয়া সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র কার্যালয়ে ওই ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে। মাত্র কুড়ি টাকায় প্রতিদিন দুপুরে সেখানে মেলে ভরপেট খাবার। সপ্তাহের সাতদিনই ওই ক্যান্টিন থেকে দুপুরে সুলভ দামে খাবার পাওয়া যায়। তবে একেবারে হতদরিদ্রদের খাবার দেওয়া হয় বিনামূল্যে। শহরে রোজই বহু মানুষ নানা প্রয়োজনে আসেন। এদের একটা বড় অংশ দরিদ্র শ্রেণির। কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজন, গ্রাম থেকে আসা টোটোচালক, আউটডোরে দেখাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজন, দিনমজুরির কাজে আসা বহু মানুষের পক্ষে হোটেলের চড়া দামে খাবার কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই নামমাত্র দরে সুষম খাবার দেওয়ার জন্যই এমন ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে।
শ্রমজীবী ক্যান্টিনের দায়িত্বে রয়েছেন সিপিআইয়ের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মূল তদারকিতে রয়েছেন সিপিআইয়ের যুব সংগঠন এআইওয়াইএফ নেতা শ্রীদীপ মুখোপাধ্যায়, গুরুপদ মণ্ডল, ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের রাজ্য সহ-সম্পাদক তথা সিপিআই নেতা প্রতীক মৈত্র ও জেলা সম্পাদক দেবাশিস ভুই। ক্যান্টিনের স্লোগান: ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না’। এবার পথচারীদের বিনামূল্যে শরবত ও লস্যি খাইয়ে নজির গড়লেন ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগে ক্যান্টিন পরিদর্শন করে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গিয়েছেন বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী।