করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর পাল্টে গিয়েছে দক্ষিণের ট্রেনের সময়, ক্ষোভ যাত্রী মহলে
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
দশ-পনেরো মিনিট বা দু’-এক ঘণ্টা দেরি নয় , ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার পরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ট্রেনের দেরির বহর এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, কখনও সখনও ক্যালেন্ডারের তারিখ বদলে যাচ্ছে! অনেক সময়ে দুপুর তিনটের ট্রেন ছাড়ছে রাত দুটোয়, কখনও রাত আটটার ট্রেন ছাড়ছে পরের দিন সকালে। বাধ্য হয়ে যাত্রীদের অনেককে স্টেশনে রাত কাটাতে হচ্ছে, কেউ আবার হেঁটেই বাড়ির পথ ধরছেন।
উল্লেখ্য, জীবিকা, চিকিৎসা, শিক্ষা-সহ নানা জরুরি প্রয়োজনে বহু মানুষ দূরপাল্লার ট্রেনে সফরকরেন। কিন্তু সময়সারণি লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় তাঁদের অনেকেরই কটাক্ষ, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরে কবে, কোন ট্রেন সময়ে চলছে তা প্রায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হবে! যেমন, গত সোমবার নির্ধারিত সময় দুপুর ৩টে ২০ মিনিটের বদলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Koromondol Express) শালিমার স্টেশন ছেড়েছে রাত ২টোয়।
ওই দিনই রাত ১০টা ১০-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসের (Azad Hind Express)। সেটি ছেড়েছে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায়। ফলকনুমা, ইস্ট-কোস্ট , হাওড়া-যশোবন্তপুর, হাওড়া-বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস, হাওড়া-মুম্বই মেলের মতো সব ট্রেন অন্তত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ছে। বিশেষত, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুগামী ট্রেনগুলির মাত্রাতিরিক্ত দেরির কারণে অনেকেই চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন এবং সময় ফস্কাচ্ছেন।
ওড়িশায় ওই দুর্ঘটনার পরে রেল বোর্ড আঙুল তুলেছিল রক্ষণাবেক্ষণের খামতির দিকে। কিন্তু তার পরেও দক্ষিণ-পূর্ব রেলে একাধিক বিপত্তির ঘটনা ঘটেছে। এর পর আধিকারিকেরা সময়ানুবর্তিতা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আতঙ্কে আছেন রক্ষণাবেক্ষণ এবং ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মীরাও। দুর্ঘটনার সামান্যতম আশঙ্কা দেখা গেলেও ট্রেন থামিয়ে দিয়ে, সময় নিয়ে কাজ শেষ করে তার পরে পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, অন্য সব রেলের মতো দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুরক্ষার কাজে যুক্ত একাধিক বিভাগে কর্মীর প্রবল সঙ্কট রয়েছে। ফলে, কোনও কাজই সময়ে সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। সব চেয়ে বড় কথা, রক্ষণাবেক্ষণের সময় তো ট্রেনের যাতায়াতের মধ্যেই ধরা থাকে। তা হলে এই অত্যধিক দেরি কেন, প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।
এই প্রসঙ্গে এক রেলকর্তার সাফাই, ‘‘শুধু দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জন্য নয়, সারা দেশে রেলের সব জ়োনেই খুঁটিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সারতে বলা হচ্ছে। ওই সময়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকছে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যে দেরির আঁচ পড়ছে সর্বত্র।’’ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্যকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের এই পর্ব কেটে গেলে আশা করছি, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’