Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
বিচিত্রতা

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ
বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ব্যক্তিগত প্লেন সিটে বসে গন্তব্যের দিকে উড়াল দিলেই হলো ছবি ফেসবুক

গল্পটি এমন এক শহরের, যেখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছোট ছোট উড়োজাহাজ বা প্লেন আছে। গাড়ির গ্যারেজ যেমন আমাদের কাছে এখন খুব পরিচিত একটি বিষয়, ওই শহরে উড়োজাহাজের হ্যাঙ্গারও তেমনি। সেখানে এমনকি গাড়ির পাশাপাশি রাস্তায় দেখা পাবেন উড়োজাহাজেরও।

শুনতে যতই অস্বাভাবিক লাগুক, এমন শহর বা বসতি সত্যি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওই এলাকার নাম ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। এখানে প্রত্যেকেই তাঁদের বাড়ির সামনেই উড়োজাহাজে চেপে চলে আসতে পারেন। যেখানে যেতে চান, নিজের ব্যক্তিগত ছোট্ট প্লেনটায় চেপে বসলেই হলো। এই আজব শহরের ছবি ও ভিডিও অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোড়ন তুলেছে।

মজার ঘটনা, শহরটির নকশাই করা হয়েছে পাইলটদের কথা ভেবে। একটি বিমানবন্দর ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে শহরটি। যেন পাইলটেরা সেখান থেকে সহজে বাড়িতে আসতে এবং বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারেন। তাঁদের বাড়িতে গ্যারেজ যদি না-ও থাকে, উড়োজাহাজ রাখার হ্যাঙ্গার ঠিকই আছে। অফিসে কিংবা বেড়াতে গেলে তাঁদের বড় ভরসা এই উড়োজাহাজ।

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ
ক্যামেরন এয়ারপার্কের রাস্তায় গাড়ির পাশাপাশি দেখা মেলে উড়োজাহাজের ছবি সংগৃহীত

এবার বরং এ রকম একটি শহরের গোড়াপত্তন কীভাবে হলো তা জেনে নেওয়া যাক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক এয়ারফিল্ডই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। পাইলটের সংখ্যা ১৯৩৯ সালে যেখানে ছিল ৩৪ হাজার, ১৯৪৬ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ। সেখানকার সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি দেশজুড়ে আবাসিক এয়ারফিল্ড গড় তোলার প্রস্তাব দিল। এর একটি উদ্দেশ্য অব্যবহৃত এয়ারফিল্ডগুলো কাজে লাগনো। অপরটি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পাইলটদেরও একটি ভালো ব্যবস্থা হওয়া। তাই এমন সব বসতি গড়ে উঠল, যেখানে সবাই কোনো না কোনোভাবে উড়োজাহাজ চালনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর এমনই একটি আবাসিক এয়ারপার্ক ক্যামেরন এয়ার পার্ক।

আরও পড়ুন :: ইউটিউব-টিকটকে ঘুমের লাইভ ভিডিও দিয়ে বিপুল অর্থ আয় করেন তাঁরা

পৃথিবীতে এ ধরনের কয়েক শ এয়ারপার্ক থাকলেও ক্যামেরন এয়ারপার্ক এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে। যদ্দুর জানা যায়, ১৯৬৩ সালে গড়ে ওঠা এই শহরে ১২৪টি বাড়ি আছে।

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ
শহরের রাস্তা পেরিয়ে খুব সহজে বিমানবন্দরের রানওয়েতে উঠে যেতে পারে প্লেনগুলো ছবি ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট ডিস্ট্রিক্ট

ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্টের একসময়কার ম্যানেজার কুকসি এক সাক্ষাৎকারে বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছিলেন, এয়ারপার্কের রাস্তাগুলো এয়ারপোর্টের রানওয়ে থেকে চওড়া। কারণ রানওয়েতে কেবল উড়োজাহাজই চলে। অন্যদিকে উড়োজাহাজ ও গাড়ি যেন পাশাপাশি নিরাপদে একে অপরকে অতিক্রম করে যেতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই এখানকার রাস্তার নকশা করা।

তাই ওই শহরে গেলে গাড়ি আর উড়োজাহাজকে রাস্তায় পাশাপাশি চলতে দেখলে চোখ কচলানোর কোনো কারণ নেই। এটাই সেখানকার অতি স্বাভাবিক চিত্র।

আরও পড়ুন :: নিজের অর্ধেক বিছানা পুরুষদের ভাড়া দেওয়াই পেশা এই তরুণীর!

এই আজব শহরের আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, এখানকার রাস্তার সাইন ও ডাকবাক্সগুলো বেশ নিচু করে বানানো, সেটা এমনকি তিন ফুটের নিচে। এর কারণ হলো উড়োজাহাজের ডানার সঙ্গে যেন এগুলোর সংঘর্ষ না হয়। রাস্তার নামগুলো উড়োজাহাজের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেমন বোয়িং রোড, সেসানা ড্রাইভ ইত্যাদি। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে রিমোট থাকে, যেটা দিয়ে বৈদ্যুতিক গেট খুলে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারেন তাঁরা।

স্বাভাবিকভাবেই উড়োজাহাজপ্রেমীদের আবাসস্থল এই শহর। ২০০৩ সালে বে এরিয়া থেকে ক্যামেরন এয়ারপার্ক এস্টেটসে ঘাঁটি গাড়েন বার্ল স্ক্যাগস। একটা কারণ, এখানকার বাড়ির দাম তখন বেশ কম ছিল, তবে আসল কারণ তাঁর একটা ব্যক্তিগত প্লেন আছে আর ক্যামেরনের প্রতিটি বাড়ির সঙ্গেই বড়সড় হ্যাঙ্গার আছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পর্যন্ত পরের সাত বছর এই প্রকৌশলী পালো আল্টোতে নিজের কর্মস্থলে যেতেন উড়োজাহাজে। এভাবে যানজটে আটকা না পড়ায় প্রতিদিন বেশ কতকটা সময় বাঁচিয়ে ফেলতে পারতেন।

‘আড়াই-তিন ঘণ্টা গাড়ি চালানোর বদলে ৩৫-৪০ মিনিটেই উড়োজাহাজে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতাম,’ স্ক্যাগস বলেন, ‘এখন আর কর্মস্থলে যেতে না হলেও এখনো একটি প্লেন আছে আমার।’

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ
ক্যামেরন পার্ক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ ছবি উইকিপিডিয়া

‘এখান থেকে অন্য কোনো বিমানবন্দরে যেতে এক ঘণ্টা লাগবে। তারপর সেখানে অপেক্ষা করতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক পরীক্ষা করা হবে। এখানে কেবল গ্যারেজের দরজা খুলে প্লেনে উঠে বসবেন। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে রানওয়েতে ওঠে পড়বেন, আর আকাশে উড়বে আপনার উড়োজাহাজ।’ বলেন শহরটিতে গড়ে ওঠা সংগঠন ফ্রেন্ডস অব ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্টের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল কুরিচক।

ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ জেলা এই ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। পাঁচ সদস্যের নির্বাচিত একটি বোর্ড এটি পরিচালনা করেন। এখানে যেসব মানুষের বাস, তাঁদের বেশির ভাগই পাইলট। তাঁরা নিজেরাই নিজেদের প্লেন চালান। শনিবার সকালে এখানকার অধিবাসীরা একত্র হয়ে স্থানীয় এয়ারপোর্টে যান।

আরও পড়ুন :: তিন স্ত্রী থাকার পরও একা লাগত বৃদ্ধের তাই ১১০ বছরে চতুর্থ বিয়ে

জুলিয়া ক্লার্কের বাসও এই শহরে। তিনি আকাশে উড়োজাহাজ নিয়ে নানা কৌশল দেখাতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বাণিজ্যিক পাইলটদের একজন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে বাস তাঁর।

তিনি জানান, এই শহরের বাসিন্দারা একে অপরের খুব কাছের। একজন আরেকজনকে ভালোভাবে জানেন। এমনকি নিজের নষ্ট হয়ে যাওয়া উড়োজাহাজটিকেও জুলিয়া মেরামত করে কাজে লাগান। নিজের অনেক কাজই সেখানে করেন। ‘আমার কাজগুলো উড়োজাহাজের ভেতরেই করি।’

যে শহরের প্রতিটি বাড়িতেই আছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ
গাড়ির গ্যারেজের মতো প্রতিটি বাড়িতে আছে প্লেনের হ্যাঙ্গারও ছবি ফেসবুক

স্ক্যাগস জানান, এখানকার যেসব মানুষ গাড়ি ভালোবাসেন, তাঁদেরও বিশাল হ্যাঙ্গারগুলো পছন্দ। তবে তিনি স্বীকার করেন, এখন শহরে বাস করা শতভাগ লোকই প্রবলভাবে উড়োজাহাজপ্রেমী নয়।

কাজেই পাঠক মার্কিন মুল্লুকে ভ্রমণে গেলে এমন একটি শহরে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। বলা যায় না, কথা বলার পর ভালো লেগে গেলে এখানকার কোনো বাসিন্দা ছোট্ট একটি উড়োজাহাজ ভ্রমণে সঙ্গীও করে নিতে পারে আপনাকে।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, পিপা নিউজ

আরও পড়ুন ::

Back to top button