বিচিত্রতা

‘দিনে পাঁচবার যৌনমিলনও আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না’

‘দিনে পাঁচবার যৌনমিলনও আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না’ - West Bengal News 24

যৌনতা আসক্তিকে একটি রোগ হিসাবে তালিকাভুক্তি এবং চিকিৎসার জন্য দাবি তুলেছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান রিলেট। যুক্তরাজ্যের জাতীয় চিকিৎসা সেবার মধ্যে সেটিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করছেন।

কথা বলেছেন এমন দুইজন রোগী, যারা অনেকদিন এই সমস্যাটি মোকাবেলা করেছেন।

তিন সন্তানের জননী রেবেকা বার্কার বলছেন, ”এটা ছিল অসহ্য একটি ব্যাপার যে, দিনে পাঁচবার যৌনমিলন করার পরেও তা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না।”

প্রতারণা করার বদলে তিনি তার সঙ্গীকে বারবার মিলিত হতে বলতেন।

”ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রথমে এটার চিন্তাই আমার মাথায় প্রথমে আসতো। অনেক চেষ্টা করেও সেটা আমি মাথা থেকে সরাতে পারতাম না। বলছেন ৩৭ বছরের নর্থ ইয়র্কশায়ারের এই বাসিন্দা।”

”সবকিছুর সঙ্গে যেন আমি এর মিল খুঁজে পেতাম। আমি মনে করি, এটা আমার বিষণ্ণতা আর সেরোটোনিনের অভাবের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমার পুরো শরীর যেন এটা চাইতো।”

”যৌনমিলন করার পর আমি খানিকটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই আবার আমার চাহিদা তৈরি হতো।”

”আমার ঘরের ভেতর থাকতেই ভালো লাগতো। কারণ সারাক্ষণ আমার মাথার মধ্যে এটাই ঘুরত বলে বাইরে মানুষজনের মধ্যে যেতেও লজ্জা লাগতো।”

আরও পড়ুন : দেয়াল বেয়ে বেয়ে উঠছে শিশু, ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

মিজ বার্কারের এই সমস্যা তার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। প্রথমে তার সঙ্গী বিষয়টি উপভোগ করলেও, পরে তা দুজনের মধ্যে জটিলতা তৈরি করে।

প্রথম দিকে সে ভালোই ছিল, কিন্তু পরে আর বুঝতে চাইতো না। পরে সে আমার বিরুদ্ধে অন্য সম্পর্ক করার অভিযোগও আনে।

২০১৪ সালের নভেম্বরে তিনি কিছুদিনের জন্য তার মার কাছে আলাদা থাকতে যান। এরপরই তাদের সম্পর্কটি ভেঙ্গে যায়।

সে সময় তিনি মানসিক চিকিৎসকের কাছেও যান। তিনি বারবার ওষুধ পাল্টে দিচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি কখনো বলেননি, এটার জন্য কোন সহায়তা করার গ্রুপ আছে।

এরপর তিনি বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য চাকরি ও স্থান পরিবর্তন করেন। এখন তিনি ফ্রান্সে বসবাস করেন। বিষণ্ণতা আর যৌন আসক্তি, দুটো থেকেই তিনি কাটিয়ে উঠেছেন।

রিলেট নামের দাতব্য সংস্থাটি বলছে, আর দশটা আসক্তির মতো যৌন আসক্তিও একটি রোগ। ২০১৯ সাল নাগাদ এটিকে একটি রোগ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অনেক সময় এই রোগে আসক্ত ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গীদের প্রতারণা করেন

আরও পড়ুন : সমুদ্রে চার দিন মূত্রপান, সন্তানদের বাঁচিয়েও মৃত্যু মায়ের

এই রোগে আক্রান্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ব্যক্তি বলছেন, তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে প্রতারণা করতে শুরু করেন।

তিনি বলছেন, ”এটা ছিল ভয়াবহ, কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যখন আপনার মাথায় সবসময়ে এটা কাজ করতে থাকে, তখন সেটা যৌন আনন্দ থাকে না, সেটা সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। ”

”এটা অনেকটা মদ্যপায়ী হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার ছিল। যখন আপনার নেশা উঠবে, তখন এটা করতে হবে। কিন্তু এরপরে চরম অপরাধ বোধ কাজ করে। আমি ভাবি, আর কখনোই এটা করবো না।”

যখন তার স্ত্রী একটি ইমেইল দেখে বিষয়টি ধরে ফেলেন, তারপরে তার এই দ্বিচারণ বন্ধ হয়।

তিনি যুক্তরাজ্যের সেক্স এডিক্টস অ্যানোনিমাস বা এসএএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। তখন তিনি দেখতে পান, তার মতো আরো অনেকে এই রোগে ভুগছে।

আরও পড়ুন : তরুণীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক! বিচ্ছেদের পরে ডলফিনের ‘আত্মহত্যা’

দি অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ট্রিটমেন্ট অফ সেক্স অ্যাডিকশন এন্ড কমপালসিভিটি বলছে, যৌন আসক্তি এখন বাড়তে থাকা একটি সমস্যা। গত কয়েক বছরে রোগীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, এদের বেশিরভাগই পুরুষ।

যাদের ৩১ শতাংশ মানুষের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছর।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পাওলা হল বলছেন, ”এই রোগীদের জন্য দরকার জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে বিনামূল্যের চিকিৎসা। কারণ এই রোগীরা ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের সহায়তা দরকার।”

”তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যে, তারা সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এর জন্য চিকিৎসা চাইতে পারবেন। কারণ এটা তাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, আর্থিক আর মানসিকভাবেও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।”

তবে এনএইচএস বলছেন, তাদের বিশেষজ্ঞরা এখনো একমত নন যে, কারো পক্ষে যৌন আসক্ত হয়ে ওঠা সম্ভব কিনা। এ ধরণের সমস্যায় সহায়তার জন্য তারা এসএএ অথবা এটিএসএসির কাছেই যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button