জানা-অজানা

বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল মানবজাতি!

বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল মানবজাতি! - West Bengal News 24

চরম প্রতিকূল কোনো আবহাওয়ার কারণে মানুষের পূর্বপূরুষদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।

হোমো হাইডেলবারজেনসিস এর মাথার খুলি। প্রাচীন এ মানব প্রজাতি প্রায় পাঁচ লাখ বছর আগে বাস করতো।

প্রায় বিলুপ্তির কিনারে পৌঁছেছিল মানবজাতির পূর্বপুরুষেরা। আজ থেকে প্রায় ৮- ৯ লাখ বছর আগে বিবর্তনীয় এক সংকটে বিলুপ্ত হতে বসেছিল তারা।

বিজ্ঞানীরা জানান, এসময় মানুষের পূর্বপুরুষের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে প্রজনন সক্ষমদের সংখ্যা ১ হাজার ২৮০ জনে নেমে এসেছিল। প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার বছর পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, চরম প্রতিকূল কোনো আবহাওয়ার কারণে মানুষের পূর্বপূরুষদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছিল।

গবেষকরা প্রায় ৩ হাজারের বেশি জীবিত ব্যক্তির জিন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

আরও পড়ুন :: যে দ্বীপে কুমিরের খাবার হয়েছিল হাজারো জাপানি সেনা

সম্প্রতি বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স‘- এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক এ গবেষক দলে ছিলেন– চীন, ইটালি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। তারা নতুন একটি কম্পিউটার মডেলও তৈরি করেন, যার সহায়তায় জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল পাওয়া গেছে।

ইতালির রোমের সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতাত্ত্বিক ও গবেষণা প্রতিবেদনের জ্যেষ্ঠ লেখক অধ্যাপক জর্জীয় মানজি বলেন, ‘বর্তমানে প্রাণীদের যেসব প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, আমাদের গবেষণালদ্ধ ফলাফল মানুষের পূর্বপুরুষের সংখ্যাও ঠিক একইরকমভাবে কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।’

মানজি বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে মানবজাতি বেঁচে যায়। তবে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান থেকে আমরা জানি যে, ছোট ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী থেকেই নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে।’

মানজি ও তার সহকর্মীদের ধারণা, অস্তিত্ব বিলুপ্তিতে পড়ার এ চাপের মুখেই হোমো হাইডেলবাজেনসিস নামক নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ প্রজাতিটি আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষদের সাথে এবং নিকটতম প্রজাতি– নিয়ানডার্থাল ও ডেনিসোভানদের সাথে সংশ্লিষ্ট। সে তুলনায়, মাত্র ৩ লাখ বছর আগে আবির্ভাব ঘটে আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সের।

আরও পড়ুন :: পৃথিবীতে বাস তো করছেন? একবারও ভেবেছেন মানুষ ছাড়া এই পৃথিবী কেমন হতে পারে?

গবেষণায় অংশ নেননি এমন একজন বিজ্ঞানী এবং লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়ামের মানব উৎপত্তির প্রধান অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেন, ‘গবেষণার এ ফলাফল দীর্ঘ এক সময়ের কথা বলছে, যখন আমাদের উৎপত্তিই বিলুপ্তির কিনারে পৌঁছেছিল। এত কম জনসংখ্যার বিলুপ্তির জন্য শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা অগ্ন্যুৎপাতই যথেষ্ট। বিবর্তনের এই সংকট মানবজাতি যে পারি দিতে পেরেছে, সেটাই বিস্ময়কর।’

জনসংখ্যার এই ব্যাপক হ্রাস ওই সময়ে বৈশ্বিক জলবায়ুতে দেখা দেওয়া উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সাথে মিলে যায়। এতে দীর্ঘকাল ধরে বরফযুগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসময় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা হ্রাস পায়- যা আফ্রিকা ও ইউরেশিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে খরা পরিস্থিতির পেছনে সম্ভবত ভূমিকা রাখে। গবেষক দলটি বলছে, এই সময়টার সঙ্গে আরেকটি ঘটনা মিলে যাচ্ছে, সেটি হলো তুলনামূলকভাবে জীবাশ্মের কোনো রেকর্ড প্রায় না পাওয়া।

মানজি বলেন, ‘আমরা জানি, আফ্রিকায় ৯ লাখ থেকে ৬ লাখ বছর আগের সময়ের জীবাশ্ম রেকর্ড প্রায় পাওয়াই যায় না, বলতে গেলে তা একেবারেই অনুপস্থিত। কিন্তু, এর আগের বা পরের সময়ের প্রচুর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। ইউরেশিয়ার ক্ষেত্রেও একই উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন ইউরোপে আমরা প্রায় ৮ লাখ বছর আগে হোমো অ্যান্টেসেসর নামের একটি প্রজাতির প্রমাণ পাচ্ছি। কিন্তু, এরপরের দুই লাখ বছরের কোনো জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি।’

অবশ্য, ক্রিস স্ট্রিঞ্জার বলেন, প্রথম দিকের মানুষের জীবাশ্ম রেকর্ডে ‘বৈশ্বিক মানব শূন্যতা’র যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই জনসংখ্যার এই ঘাটতি স্থানীয় কোনো কারণে হতে পারে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, ‘হয়তো ক্ষুদ্র এ জনগোষ্ঠী আফ্রিকার মরুবেষ্টিত কোনো অঞ্চলে আটকে পড়েছিল।’

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় ১০টি আফ্রিকার ও ৪০টি আফ্রিকার বাইরের জনগোষ্ঠীর মোট ৩ হাজার ১৫৪ জীবিত মানুষের জিন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জিনের গঠন বিশ্লেষণের মাধ্যমে কবে কখন নির্দিষ্ট কোনো জিনের উদ্ভব ঘটেছে তা জানা গেছে। কালক্রমে আরও জিনের আবির্ভাব ঘটে মানবজাতির বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সূচনা করেছে।

তাই নতুন জিন তৈরির হার বিশ্লেষণ করে, সময়ের সঙ্গে মানুষের পূর্বপুরুষদের কীভাবে বিস্তার ঘটেছে বা তাদের জনসংখ্যা সংকুচিত হয়েছে– সে সম্পর্কে ধারণা পান বিজ্ঞানীরা।

সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য