মতামত

করোনা সংক্রমণে সংকটজনক ভারত বর্ষ

মৃত্যুঞ্জয় সরদার

করোনা সংক্রমণে সংকটজনক ভারত বর্ষ - West Bengal News 24

বিশ্বে খ্যাত হই ,আর বিখ্যাত হই অট্টালিকার পরে থাকি, আর নাইবা থাকী। ক্ষমতার দম্ভ আর ঐতিহাসিক নাম লেখানো ব্যক্তি সবাইকে এক নিমিষে শেষ করে দিচ্ছে সামান্য একটি ভাইরাস। ঐ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বিশ্বের কোন দেশের সেভাবে নেই। বিশ্বে যত পাপ বেড়ে গেছে ততই যেন ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে অচেনা এক শক্তি যা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এই ভাইরাসটি নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছে অনেকেই এটা প্রাকৃতিক থেকে সৃষ্টি করোনাভাইরাস না কৃত্রিমভাবে তৈরি এনিয়ে সঠিক কোন তথ্য আজও কেউ উদ্ধার করতে পারেনি। এই ভাইরাসকে রোধ করার জন্য বিশ্বের কোন দেশ সঠিকভাবে পরিকল্পনা আজও নিচ্ছে না কেন? এই ভাইরাস মেরে দেওয়ার জন্য যে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হলো সেই ভ্যাকসিনের কতটা যে কার্যকারী তা সাধারণ মানুষকে জ্ঞাত নয় ।এবং ভ্যাকসিনের দাম ব্যবসায় ভিত্তিক অন্যরকম দ্বিচারিতা চলছে রাজ্য কেন্দ্রের আলাদা আলাদা দাম নেই। এর থেকে মনে হচ্ছে কোন এক শক্তি গ্রাস করতে চাচ্ছে সারাবিশ্বকে ।

একই শক্তির দ্বারা পরিচালিত হবে প্রশাসন ও রাজনৈতিক এবং সমস্ত বিশ্ব। কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবেই কেন্দ্র শাসিত সরকার গুলো। সারাবিশ্বে কুড়ি শতাংশ মানুষকে মেরে দেওয়ার পরিচালনা করছে এই শক্তি যা একটি মহারাজের অডিও বার্তাতে প্রকাশ্য এসেছে এই তথ্য। ওইই অডিওবার্তায় সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি আমার মতন সাংবাদিককের। সেই কারণে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আজ যেন কেন্দ্র কেন ,বিশ্বের কারোরই কোন সঠিক পরিকল্পনা নেই। হাসপাতলে করোনা রোগীদের কোনো বেড নেই, অক্সিজেন যেন হাহাকার চলছে ভারতবর্ষে। অক্সিজেনের অভাবে শত শত মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, এই মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। সেই কারনে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নেওয়ার জন্য সরকারি উদাসীনতাকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করছেন বিদেশের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে করোনার বাড়বাড়ন্ত আটকাতে সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এদিক মহামারী করোনা আক্রান্ত হয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ প্রয়াত হন। তার আট দিনের মাথায় মৃত্যু হল তাঁর স্ত্রী প্রতিমা ঘোষেরও। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তিনি নিজের বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন প্রতিমা ঘোষের বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। গত ১৪ এপ্রিল করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে শঙ্খবাবু করোনায় পজিটিভ হন ১৪ ই এপ্রিল। সেই সঙ্গে আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রীও। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল তাঁদের। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। গত ২১ এপ্রিল মৃত্যু হয় শঙ্খ ঘোষের। পরিবার সূত্রে খবর, শঙ্খবাবুর মৃত্যুর পরে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থাও অবনতি হতে থাকে । বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ মৃত্যু হয় তাঁর। এদিকে আনামিকা সাহার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। এখন কৃত্রিমভাবে তাকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।  হাসপাতালের বরাত দিয়ে আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে বর্ষীয়ান এ অভিনেত্রীকে। তার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনামিকা সাহা কয়েক দিন আগে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই জানান। জানিয়েছিলেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরও। নব্বই দশকের কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অংশ অনামিকা সাহা। অসংখ্য হিট সিনেমায় শাশুড়ি অথবা মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শক মনে জায়গা করে নেন তিনি। অধিকাংশ সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। মূলত ভারতীয় বাংলা সিনেমার ‘লেডি ডন’ হিসেবে পরিচিত এই অভিনেত্রী।

এদিকে হালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বহু চিকিৎসক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ভারতে হঠাৎ করোনার এই ভয়াবহতার কারণ কী? বেশির ভাগই বলেছেন, নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির প্রচারে জমায়েত থেকে শুরু করে কুম্ভ মেলা— সব ক’টি কারণই রয়েছে এর পিছনে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরের গোড়ায় ভারত সরকার ভেবে নিয়েছিল, তারা করোনা যুদ্ধ জিতে গিয়েছে। তাই লকডাউন শিথিল করা হয়। শুরু হয় বিদেশে বিপুল পরিমাণে টিকা পাঠানো। আর এই তাড়াহুড়োই বিপদ ডেকে এনেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসকেরা আর্জি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। বাইরে সব সময় মাস্ক পরার। দ্বিতীয় তরঙ্গ আটকাতে নতুন কিছু স্বাস্থ্যবিধির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। যেমন বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমিত হলে অনেক সময়ই করোনা পরীক্ষায় তা ধরা পড়ছে না। অথচ উপসর্গ থাকছে। এ সব ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বলা হয়েছে, এ বার ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে থাকা মানুষ আগের বারের চেয়ে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজে করা সম্ভব এমন কয়েকটি নতুন পরীক্ষার কথাও বলা হয়েছে এখানে। আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেই বুঝতে পারেন না তাঁদের সংক্রমণ কতটা গুরুতর। তাঁদের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ‘৬ মিনিট হাঁটা’ পরীক্ষার। করোনা সংক্রমিত হলে শরীর কতটা খারাপ, তা বোঝার সবচেয়ে সহজ রাস্তা এটি। এতে বলা হয়েছে, উপসর্গ যে দিন দেখা দিয়েছে, তার ৩ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত রোজ টানা ৬ মিনিট করে হাঁটুন। হাঁটা শেষ করেই অক্সিমিটারে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করুন। ৬ মিনিট হাঁটার ফলে অক্সিজেনের মাত্রা কি আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বা তার বেশি হ্রাস পাচ্ছে? এর অর্থ নিউমোনিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সব ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ গুলির মধ্যে অন্যতম হল ভারত। গত বছর ব্যাপক সংক্রমণে বিপর্যয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ভারতে। এবছর ও পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। অক্সিজেনের অভাবে দিল্লিসহ বেশ কিছু শহরে করোনা রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের থাবায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। বিভিন্ন দেশে হু হু করে বাড়ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। সম্প্রতি এই তালিকায় প্রথমের সারিতে রয়েছে ভারত। তার কারণ ভারতে প্রতিদিন ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। বাড়ছে সংকটজনক রোগীর সংখ্যার পরিমাণও। সংক্রমণের কারণে ইতিমধ্যে ভারতের একাধিক রাজ্যে লকডাউন এবং কার্ফু চালু করা হয়েছে। আবার অনেক মানুষ নিজে থেকেই ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে। কারণ করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ের থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আগের থেকে ছড়িয়ে পড়ছে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে। এছাড়া আগের থেকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সেই কারণে শিশুদের কথা ভেবে অনেক অভিভাবক বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করেছে। তবে বাচ্চাদের সুরক্ষার উপায়গুলি সন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চাদের মানসিক দিকটি। এছাড়া, একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৪ জন। এতে ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৯০ জনে।

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৯৫ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩৭ জন মারা গেছেন। লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী এক কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৮০৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৩ জনের।অন্যদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে মোট আক্রান্ত এক কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৮১২ জন।এছাড়া এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫২ জন, রাশিয়ায় ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৭৩ জন, যুক্তরাজ্যে ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৭৯৭ জন, ইতালি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৪ জন, তুরস্কে ৪৭ লাখ ৫১ হাজার ২৬ জন, স্পেনে ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৭৯৯ জন, জার্মানি ৩৩ লাখ ৫১ হাজার ৪৭৪ জন এবং মেক্সিকোতে ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে এক লাখ ৩ হাজার ৯১৮ জন, রাশিয়ায় এক লাখ ৯ হাজার ৩৬৭ জন, যুক্তরাজ্যে এক লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ জন, ইতালিতে এক লাখ ২০ হাজার ২৫৬ জন, তুরস্কে ৩৯ হাজার ৩৯৮ জন, স্পেনে ৭৭ হাজার ৯৪৩ জন, জার্মানিতে ৮৩ হাজার ১৮ জন এবং মেক্সিকোতে ২ লাখ ১৫ হাজার ৯১৮ জন মারা গেছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ৬৪৭ জন। ভারতে করোনার ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড।বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭ জন এবং মারা গেছেন দুই লাখ চার হাজার ৮১২ জন। আক্রান্তের দিক থেকে দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।দেশটিতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৬ জন এবং বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৮ জন।গঠনগতভাবে করোনা ভাইরাস একটা বিশাল আরএনএ (RNA) ভাইরাসের পরিবার। “করোনা” শব্দটার আক্ষরিক অর্থ হলো মুকুট। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় এই পরিবারের ভাইরাসকে অনেকটা রাজার মাথার মুকুটের মতন দেখায়, সেই থেকে এই নামকরণ (ছবি ১ দেখুন)। অন্যসকল ভাইরাসের মতো এরাও জীবনধারণ ও বংশবৃদ্ধির জন্য কোন না কোন একটা প্রাণী বা উদ্ভিদ কোষের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে।

কেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ?
ভাইরোলজিস্ট শতদল দাস বলছেন, “সাধারণত করোনা ভাইরাস জাতীয় মহামারি একবার যখন আসে ঠিক তার এক বছরের মধ্যে সে আবার অতিরিক্ত শক্তি নিয়ে ফিরে আসে। এটাই ভাইরাসের চরিত্র। দ্বিতীয়বার এই মহামারির (Corona Epidemic) ফিরে আসার সময় সে নিজেকে আরও পরিবর্তিত (Mutate) করে নিয়ে চরিত্রের দিক থেকেও নিজেকে শক্তিশালী করে তোলে। এ ছাড়া এই জাতীয় মহামারি প্রথমে যে ঋতুতে আসে, পরের বার আবার ঠিক সেই ঋতুতেই আসে। তাই দেখবেন, গত ২০২০তে যে সময় আমাদের দেশে করোনা হয়েছিল এবারও ঠিক সেই একই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। আমরা এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে খুব একটা বেশি কিছু জানতে এখনও পারিনি। তবে যেটুকু জানতে পেরেছি তাতে ভাইরাসের চরিত্র অনুযায়ী করোনা ভাইরাস তার চরিত্র বদল করে আরও বেশি শক্তি নিয়ে এবার এসেছে।”

এছাড়া, মার্স কভ (MERS-CoV) – এটা একটা বিটা করোনাভাইরাস যা থেকে ২০১২ সালে মিড্ল্ ইস্ট রেস্পিরেটারি সিন্ড্রোম বা মার্স (Middle East Respiratory Syndrome, or MERS) ছড়িয়েছিল। সার্স কভ (SARS-CoV)– এটা একটা বিটা করোনাভাইরাস যা অতি তীব্র শ্বাস রোগ  বা সার্স (severe acute respiratory syndrome, or SARS) ছড়িয়েছিল। প্রথম ২০০২ সালে চীন দেশে এই রোগ দেখা গিয়েছিল।  মৃত্যুর হার প্রায় ১০০ রোগীপিছু ১০, তবুও এই রোগকে দ্রুত বাগে আনা গেছিলো কারণ মানুষ থেকে মানুষে তার সংক্রমণের হার ছিল কম। সব মিলিয়ে মোট ৮,০০০-এর কাছাকাছি রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয় ও প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়। গবেষণায় প্রমাণ হয় যে একধরনের গন্ধগোকুল প্রজাতির প্রাণীর থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছিল।  তৃতীয় আরেকটা টাইপ, সার্স কভ-২ (SARS-CoV-2) (severe acute respiratory syndrome coronavirus 2)-কেই নভেল করোনা ভাইরাস বলা হয়। এই সার্স কভ-২ মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ডিসিজ সংক্রামিত করে। এই ভাইরাসকে নভেল বা নতুন বলা হচ্ছে কারণ এই সংক্রামক ভাইরাসটা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটার আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি (2019-NCOV)। মানুষ থেকে মানুষে এর সংক্রমণের হার প্রচণ্ড বেশি। সারা পৃথিবীর প্রায় ১৬৬টা দেশ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত।

এই ভাইরাসের সবচেয়ে বাইরের অংশে থাকে গ্লাইকোপ্রোটিনের স্পাইক বা কাঁটা যেগুলোর সাহায্যে ভাইরাসটা জীবন্ত কোষে আটকে গিয়ে সংক্রামিত হয়। দ্বিতীয় উপাদানটা হলো রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ (RNA)। জীবন্ত কোষের ভিতরে প্রবেশ করে ভাইরাসটা  আরএনএ-র প্রতিলিপি তৈরি করে বংশ বিস্তার করে। আর তৃতীয় উপাদানটা হ’ল একটা লিপিড স্তর, এটা ভাইরাসের অন্যান্য অংশকে ধরে রাখে। করোনাভাইরাস-এর মারাত্মক প্রকোপ এবং এবং তাকে কিকরে ঠেকিয়ে রাখা যায়, সেটা বুঝতে হলে এই তিনটে অংশের কথাই আমাদের মাথায় রাখতে হবেযদিও করোনাভাইরাসের অনেক প্রজাতি আছে, তার মধ্যে মাত্র সাতটা প্রজাতি মানুষের দেহে রোগ সংক্রমণ করতে পারে [১]।  এদের মধ্যে চারটে সারা বছর ধরে অত্যন্ত সাধারণ হাঁচি-কাশি সর্দির উপসর্গ সৃষ্টি করে। এরা হল, 229E (আলফা করোনাভাইরাস), NL63 (আলফা করোনাভাইরাস), OC43 (বিটা করোনাভাইরাস), HKU1 (বিটা করোনাভাইরাস)।

তবে প্রথম ঢেউয়ের থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের কী পার্থক্য?
প্রথম করোনা ভাইরাস থেকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঝাপ্টার শক্তি অনেক বেশি, বললেন ভাইরোলজিস্ট শতদল দাস। তিনি একটি তথ্য দিয়ে বলেন, “আমরা দেখেছি সাইকেল থ্রেশোল্ড বা CT ভ্যালু (CT Value of Corona Virus) প্রথম করোনা ভাইরাসের বেশি ছিল। তাই করোনার প্রথম ঝাপ্টার শক্তিই অনেক কম ছিল। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের CT ভ্যালু প্রথমের চাইতে বেশি। তাই এবারের করোনা ভাইরাসের ভাইরাল লোড (Viral Load)  অনেক বেশি। সাধারণত CT ভ্যালু বেশি থাকলে ভাইরাল লোড কম থাকে। আর CT ভ্যালু কম থাকলে ভাইরাল লোড বেশিই থাকে। বলা যায় ভাইরাল লোডের সঙ্গে CT ভ্যালু-র সম্পর্ক ব্যাস্তানুপাতিক। আমরা করোনার প্রথম ঝাপটায় পরীক্ষা করে CT ভ্যালু পেতাম ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। আর দ্বিতীয় করোনার ঢেউয়ের পরীক্ষার পর CT ভ্যালু পাচ্ছি ১০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। তাই বুঝতেই পারছেন এবারের করোনা ভাইরাসের ভাইরাল লোড অর্থাৎ ক্ষতিকারকতা কতটা বেশি! তাই আমরা দেখছি এবার কোনও বাড়ির করোও একজনের করোনা হলে সেই বাড়ির সবাই করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বাচ্চারাও। প্রাণহানিও ঘটছে প্রচুর।

উপসর্গের দিক থেকেও প্রথম বারের করোনার থেকে দ্বিতীয়বারের করোনার উপসর্গ আলাদা। প্রথমবার জ্বর, গা ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, মুখের স্বাদ চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ ছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মূল উপসর্গ হচ্ছে শুরুতেই প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে দ্রুত বাড়তে থাকা জ্বর, বমিবমি ভাব। এর সঙ্গে ডায়রিয়া বা পেট খারাপ।”যাক এসব কথা,শতদল দাস জানান, “তবে এখনও করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে সেই ভাবে বড় কিছু জানা যায়নি। তাই বলা যাচ্ছে না করোনা ভাইরাস গ্রীষ্ম প্রধান দেশে না শীত প্রধান দেশে বেশি হতে পারে। তবে যাদের কম বয়স তাদের এবার করোনা প্রথম বারের তুলনায় বেশি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা যায়, বয়স্করা ভ্যাকসিন নিয়েছেন এপ্রিল মাস থেকে। তাই তাঁরা নিরাপদ আছেন। আর তাই প্রথম বারের তুলনায় কম বয়সীদের এবার বেশি করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। কারণ তারা ভ্যাকসিন নেয়নি। তবে এর মধ্যে আমরা একটা বিষয় লক্ষ্য করছিই, যাদের করোনা ছাড়া অন্য রোগ রয়েছে , তাদের করোনা হলে মৃত্যু হার বেশি। প্রথমবার সেটা ছিল না। প্রথমবার করোনা হলেই বেশিরভাগ মানুষ মারা যেতেন। এবার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে যারা শুধু করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন, তাদের অন্য রোগ না থাকলে তাঁরা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তবে সবাই এই বিষয়টি সমর্থন করছেন না। সেই লক্ষ্য সামরিক খাতে খরচের বিবেচনায় বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের তালিকায় চলে এসেছে ভারত। সুইডেনের প্রতিরক্ষা সমীক্ষা সংস্থা ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ জানিয়েছে, ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সামরিক ব্যয়ে আমেরিকা এবং চিনের পরেই ভারতের অবস্থান। তাই স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানায়, ২০২০ সালে আমেরিকার মোট প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল ৭৭,৮০০ কোটি ডলার (প্রায় ৫৮ লক্ষ ৩ হাজার ৪০৫ কোটি রুপি), চিনের বরাদ্দ ছিল ২,৫২,০০ কোটি ডলার (প্রায় ২২ লক্ষ ৭১ হাজার ৮৪৪ কোটি রুপি) এবং ভারতের মোট প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ছিল ৭,২৯০ কোটি ডলার (প্রায় ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ২১২ কোটি রুপি)। এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়ায় ২০২০ সালে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৬,১৭০ ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৪১ কোটি রুপি), পঞ্চম ব্রিটেনের ৫,৯২০ কোটি ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭০৩ কোটি রুপি), ষষ্ঠ সৌদি আরবের ৫,৭৫০ কোটি ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ১৮ হাজার ৩৭৭ কোটি রুপি)।

এই তালিকায় যৌথ ভাবে সপ্তম ফ্রান্স এবং জার্মানির সামরিক বরাদ্দের পরিমাণ ৫,৩০০ কোটি ডলার (প্রায় ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮০৮ কোটি রুপি)। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনালের ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশই করে আমেরিকা। এ খাতে চিনের ব্যয় ১৩ শতাংশ এবং ভারতের ব্যয় ৩.৭ শতাংশ। ২০১৯ সালের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির তুলনামূলক পরিসংখ্যানেও এগিয়ে আমেরিকা। দেশটিতে এক বছরে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ বেড়েছে ৪.৪ শতাংশ। বৃদ্ধির হারে চিনকে (১.৭ শতাংশ) ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত (২.৯ শতাংশ)।

আরও পড়ুন ::

Back to top button