আজ গুরু পূর্ণিমা– আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাকে ‘গুরু পূর্ণিমা’ বলা হয়। কিন্তু বৈদিক পঞ্জিকা ও পূর্ণিমা তিথি অনুযায়ী আজই শ্রাবণ মাসের তিন তারিখে গুরু পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে।
জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। প্রাচীন আর্য সমাজে গুরুর স্থান ছিল সমাজে সকলের ওপরে। গুরু বা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই পালিত হয়ে আসছে গুরু পূর্ণিমা।
অবশ্য গুরুর গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বোঝা যায় এই প্রবচনটির মাধ্যমে———-
‘‘গুরু গোবিন্দ দুয়ো খাড়ে, কাকে লাগু পায়
বালিহারি গুরু আপনে যিন গোবিন্দ দিয়ো বতায়ে’’।।
অর্থাৎ, এমন একটা পরিস্থিতি যখন গুরু ও গোবিন্দ বা ঈশ্বর দু’জনেই সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি কাকে প্রথম পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব? তার পরের লাইনেই আছে সমাধান। যদি ঈশ্বর ও গুরু দু’জন সামনে থাকেন, আগে গুরুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবেন। কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বরকে চেনান।
বৌদ্ধ ধর্মেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। বলা হয়, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ আজকের উত্তরপ্রদেশের সারনাথে।
আবার হিন্দু পুরাণে আছে শিবের মাহাত্ম্য। মহাদেব হলেন আদি গুরু। তাঁর প্রথম শিষ্য হলেন সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি :- অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি ও ক্রতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে) আদিযোগী শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। তিনি এদিন এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা।
ভারতের অনেক জায়গায় গুরু পূর্ণিমাকে মহাঋষি বেদব্যাসের জন্মতিথি হিসেবেও মানা হয়। যদিও তিনি ছিলেন ঋষি পরাশর ও মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর সন্তান। জন্মের পরে তাঁকে পরিত্যাগ করেন জন্মদাত্রী সত্যবতী। এই সন্তানই মহাঋষিতে পরিণত হন। সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন চতুর্বেদের। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও রচনা করেন মহাভারত। ওই দিনই তিনি ব্রহ্মসূত্র লেখা সমাপ্ত করেন। বলা হয় আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই জন্ম হয়েছিল ব্যাসের। তাই এই পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমা বলেও অভিহিত করা হয়।
“গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ।
গুরুরেব পরম্ ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ”।।
অর্থাৎ জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন।
গুরু পূর্ণিমা ———-
।। ২০/০৭/২০২৪ শনিবার ।।
।। সন্ধ্যা : ০৬.৪০ মিনিট থেকে শুরু ।।
।। ২১/০৭/২০২৪ রবিবার ।।
।। বিকাল : ০৪.১৬ মিনিট অবধি ।। পঞ্চাঙ্গ ও উদয় তিথি অনুযায়ী আজই গুরু পূর্ণিমা।।